, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

‘দৃশ্যমান’ পদ্মা সেতুতে বিএনপির অস্বস্তি!

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ : 

‘দৃশ্যমান’ পদ্মা সেতুতে বিএনপির অস্বস্তি!

সব জল্পনা-কল্পনা ও গুজবের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে পদ্মা সেতু চূড়ান্ত বাস্তবায়নের দিকে। এ নিয়ে সরকার ও তার সমর্থকরা যখন উজ্জীবিত, তখন বিএনপি ও তার মিত্ররা অনেকটা অস্বস্তিতে। নেতাদের বক্তব্যে অস্বস্তি অপ্রকাশিতও থাকছে না।


এই পদ্মা সেতু নিয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। অনেক ঝুঁকি আছে।’ যদিও এই বক্তব্য নিয়ে তখনই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় দেশের অন্যতম বৃহৎ দলের প্রধানকে।


কিন্তু সে সময় দলীয় প্রধানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারাও একই রকমের বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছিলেন, ‘একটা ভ্রান্ত ও ভুল ডিজাইনের ওপর পদ্মা সেতু নির্মিত হলে সেটা যে টিকবে না, সেটা তো খালেদা জিয়া ভুল বলেননি।’


প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দীর্ঘায়িত হলেও পদ্মা সেতু এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের জোয়ার বইছে। নাগরিক সমাজ, সুধীজনরাও এক্ষেত্রে উচ্ছ্বাস চেপে রাখছেন না। কিন্তু এ নিয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা তাৎক্ষণিক কিছু বলেননি, দলটির পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।


বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না পদ্মা সেতুকে সরকারের ভালো উদ্যোগ বললেও নির্মাণ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।


গত ১০ ডিসেম্বর শেষ স্প্যান বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ প্রকল্প নিয়ে কিছু প্রশ্ন রেখেছেন। ‘পদ্মা সেতুতে শেষ স্প্যানটি বসানো উপলক্ষে উচ্ছ্বসিত আবেগে দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই সেতু সম্পর্কে আমার কিছু জানার আছে, জিজ্ঞাসা আছে’ শিরোনামে দেয়া পোস্টে তিনি পদ্মা সেতুর ১২টি বিষয় নিয়ে প্রশ্নগুলো করেন, যেখানে মূলত ব্যয়ের বিষয়ই প্রাধান্য পেয়েছে।


সূত্র বলছে, আগে দলীয় প্রধানের সঙ্গে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন নিয়ে নানা বক্তব্য-বিবৃতি দিলেও এখন নীরবতাকেই বেছে নিয়েছেন দলটির নেতারা। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশেই তারা পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকছেন। এমনকি পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপিকে জড়িয়ে ট্রল বা হাস্যকর মন্তব্য করা হলে সেটিকেও এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে হাইকমান্ডের তরফ থেকে। প্রয়োজনে রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, সভা-সেমিনারে পদ্মা সেতুর খরচ নিয়ে কথা বলতে বলা হয়েছে।


বিএনপির একটি অংশ মনে করছে, পদ্মা সেতু নিয়ে দলের অবস্থান ঠিক ছিল না। এতো বড় একটি উদ্যোগের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে বিএনপি কার্যত দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা-প্রত্যাশার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। খালেদা জিয়ার ওই দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে সরকার যা দৃশ্যমান করেছে, তা দক্ষিণাঞ্চলে বিএনপির রাজনীতিকে আরও বেকায়দায় ফেলবে।


জ্যেষ্ঠ নেতারা পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ নিয়ে নীরবতা পালন করলেও গত ১৪ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেন, ‘মনে হয় যে তারা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ে (পদ্মা সেতু) তৈরি করেছে। একজন তো বলছে, বিএনপি উপর দিয়ে যাবে না নিচ দিয়ে? মানে এটা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি।’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষের পকেট কেটে কেটে সব নেয়া হচ্ছে। প্রত্যেকটি মানুষ এখানে ট্যাক্স দিচ্ছে। যেখানে এক টাকা সেখানে ১০ টাকা ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। ভ্যাটের পরিমাণ তিন/চার/পাঁচগুণ বেড়ে গেছে।’


তিনি বলেন, ‘আপনারা গভীরভাবে দেখবেন এখানে যেটা চলছে সেটা হলো উন্নয়নের নামে পুরোপুরিভাবে একটা লুটপাট। প্রত্যেকটা জায়গায় তারা এখন মুনাফা খোঁজে। বাড়িঘর বানাচ্ছে, উড়াল সেতু বানাচ্ছে, মেগা প্রজেক্ট বানাচ্ছে- মেগা লুট করছে।’