রাজউকের কাঁধেই হাতিরঝিল রক্ষণাবেক্ষণের ভার
প্রকাশ :
রাজধানীর অন্যতম দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিল। ২০১৩ সালে উদ্বোধনের পর থেকে এর ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (এসডব্লিউও)। আগামী ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরপর হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর কাছ থেকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) হাতে যাবে। অবশ্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও (ডিএনসিসি) এ দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, তবে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
২০০৭ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) হাতিরঝিল প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্পে ব্যয়ের এক হাজার ৯৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকার মধ্যে বাস্তবায়নকারী সংস্থা রাজউকের এক হাজার ১১৩ কোটি ৭ লাখ, এলজিইডির ২৭৬ কোটি এবং ঢাকা ওয়াসার ৮৬ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা রয়েছে।
আর্মি দিয়ে কি আসলে ঢাকা শহরের মতো জায়গায় সারাজীবন মেইনটেইন করা যাবে? মানুষকেই সচেতন হতে হবে, যেন জিনিসগুলো নষ্ট না হয়। আরও কিছুদিন হাতিরঝিলকে ম্যানেজমেন্টের মধ্যে রাখতে পারলে আরেকটু ভালো হতে পারতো। আমরা আট বছর ধরে এটা ম্যানেজমেন্ট করছি। তার মাঝে যে ছোটখাটো ঘটনা ঘটেনি তা নয়। কারণ আইন-শৃঙ্খলা আমাদের হাতে নেই। তবে আর্মি আছে বলে এখানে অটোমেটিক্যালি ৯০ ভাগ ক্রাইম হয় না
২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন এবং তদারকি করছিল এসডব্লিউও। আগামী ৩০ জুন এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফলে যথাসময়ে হাতিরঝিলের দায়িত্ব রাজউককে বুঝিয়ে দিতে হবে সেনাবাহিনীকে।
এদিকে হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয়ার মৌখিক প্রস্তাব দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র। তবে এখনো সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা সেনা কর্তৃপক্ষ বলছে, এসডব্লিউও আরও কিছুদিন হাতিরঝিলের দায়িত্বে থাকলে এটাকে সুন্দর রাখা সম্ভব হবে।
২০১৩ সালে হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, সেনাবাহিনীর উপস্থিতি যেখানেই থাকবে সেখানে অবশ্যই তার প্রভাব থাকবে, সেনাবাহিনী সেভাবেই কাজ করে। সেজন্য সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা আছে। মানুষ সেনাবাহিনীর কথা শোনে।
হাতিরঝিল তো কোনো নরমাল লেক বা খাল নয়। এটা একটা বিশেষায়িত প্রকল্প। এখানে রোড নেটওয়ার্ক করা আছে, ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস আছে, বাস নেটওয়ার্ক আছে। এখানে রাজউক তার নিজস্ব ৫১ একর জায়গা দিয়েছে। রাজউক তো এই প্রজেক্ট ইচ্ছা করলেই কাউকে দিয়ে দিতে পারে না বা ছেড়ে দিতে পারে না। এখানে রাজউকের নিজস্ব বিনিয়োগও আছে। এটা রাজউকের একটা পরিচিতি। সুতরাং কারও গর্বের বিষয় তো আর কেউ ছেড়ে দিতে পারে না
তারা বলেন, সেনাবাহিনী শুধু প্রকল্পের অনুকূলে থাকা অবকাঠামোগত নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার বিষয়টি দেখতো। কিন্তু কেউ এখানে এসে মারামারি করলে তাকে আমরা ধরেছি বিষয়টি তেমন নয়, তবে পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি থাকলে অটোমেটিক্যালি সমস্যাটা কম হয়। এ ধরনের যতো ঘটনা আছে, সবই পুলিশ কর্তৃক সামলানো হয়েছে। তবে হাতিরঝিলের মতো অবকাঠামো যদি নষ্ট হয়ে যায় সেটা জাতির জন্য দুঃখজনক ব্যাপার হবে। এটাকে সুন্দর রাখতে যদি সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রয়োজন মনে করে, তাহলে তারা যে কোনো সময় সেটি বলতে পারে, সেনাবাহিনী সেটাকে স্বাগত জানাবে।
হাতিরঝিল লেকের দূষিত পানি পরিশোধন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী শাকিল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগামী ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকেই আমাদের পাওয়া যাবে না, বিষয়টা এমন নয়। অথরিটিক্যালি ৩০ জুনের মধ্যে আমাদের কাজগুলো শেষ হবে। এরপরও প্রকল্প সমাপনী প্রতিবেদন দেয়া এবং অন্যান্য ম্যানেজমেন্টের জন্য আমাদের তিন মাস সময় থাকে। এই সময়ের মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত আসবে যে, সেনাবাহিনী এটার দায়িত্ব পালন করবে নাকি রাজউক। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্তটি এমনই আছে—রাজউক হাতিরঝিলের দায়িত্ব নেবে, প্রকল্পটি রাজউকেরই ছিল, তারাই রক্ষণাবেক্ষণ করবে। তবে এটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে টপ লেভেল (উচ্চ পর্যায়) থেকে সিদ্ধান্ত আসবে।’
হাতিরঝিলের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ডিএনসিসি
তিনি বলেন, ‘আমরা পাবলিক সেন্টিমেন্ট (মনোভাব) যতটুকু বুঝি, তারা চায় সেনাবাহিনী এটা কন্টিনিউ (রক্ষণাবেক্ষণ) করুক। কিন্তু আমরা অফিসিয়ালি সেটা বলতে পারছি না। প্রকল্পের কাজ শেষে আমাদের যেতে হবে, কিন্তু এখন যদি আমাদের রেখেই হাতিরঝিল ম্যানেজমেন্টের কাজটি করতে হয় সে বিষয়টি টপ লেভেল থেকে চাইতে হবে। সেনাবাহিনীর চাওয়া না চাওয়াটা এখানে বিষয় না।’
রাজউক প্রকল্প বন্দোবস্ত এবং পরিচলনার সক্ষমতা রাখে না। কারণ হাতিরঝিলের মতো প্রকল্পের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। একটা রক্ষণাবেক্ষণ, আরেকটা নিরাপত্তা ও গার্ডেনিং। এগুলো রাজউকের দ্বারা করা সম্ভব নয়। কারণ রাজউকের এই এখতিয়ার নেই। কারণ রাজউক তো পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ করে। ফলে পুরোটাই সিটি করপোরেশনের কাজ
লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী শাকিল হোসেন আরও বলেন, ‘সব বিষয় নিয়েই কথাবার্তা হয়েছে। রাজউক-সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ আমরা মিটিং করেছি। গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, রাজউক চেয়ারম্যান জানেন, জুনের পর সেনাবাহিনীর অ্যাকটিভিটিজ (কার্যক্রম) বন্ধ হবে। দায়িত্ব নিয়ে রাজউক এটা কতটুকু পারবে তা নিয়ে আমরাও সন্দিহান। সেনাবাহিনী মূলত ডেভেলপমেন্টের (উন্নয়ন) কাজ করে, মেইনটেনেন্সের (রক্ষণাবেক্ষণ) কাজ করে না। আমরা নতুন প্রকল্প হলে সেটা সাজিয়ে-গুছিয়ে দিয়ে যাবো। কিন্তু আর্মি দিয়ে কি আসলে ঢাকা শহরের মতো জায়গায় সারাজীবন মেইনটেইন করা যাবে? মানুষকেই সচেতন হতে হবে, যেন জিনিসগুলো নষ্ট না হয়। আরও কিছুদিন হাতিরঝিলকে ম্যানেজমেন্টের মধ্যে রাখতে পারলে আরেকটু ভালো হতে পারতো। আমরা আট বছর ধরে এটা ম্যানেজমেন্ট করছি। তার মাঝে যে ছোটখাটো ঘটনা ঘটেনি তা নয়। কারণ আইন-শৃঙ্খলা আমাদের হাতে নেই। তবে আর্মি আছে বলে এখানে অটোমেটিক্যালি ৯০ ভাগ ক্রাইম হয় না।’
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (প্রজেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন) এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, ‘হাতিরঝিল প্রকল্পটি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ৩০ জুনের পরই আমরা (রাজউক) আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ে নেবো। সেনাবাহিনী (রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে) থাকবে কি-না সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। সরকার যদি মনে করে তারা আরও কিছুদিন রাখতে পারবে, তাহলে রাখতে পারে অসুবিধা নেই। তবে সেনাবাহিনী নিজেদের দায়িত্বে রাখার বিষয়ে কোনো প্রস্তাব দেয়নি। এগুলো তো সরকারি প্রজেক্ট, একটি মেয়াদ থাকে। সরকারি মেয়াদ হিসেবে সেনাবাহিনী কাজ করে। সেনাবাহিনী কোনো মেইনটেনেন্সের কাজ করে না, তারা করে নতুন ডেভেলপমেন্টের কাজ। মেইনটেনেন্সের জন্য তো সেনাবাহিনীর অফিসার বা সৈনিকরা থাকতে পারেন না।’
ময়লা-আবর্জনা সমেত পানি হাতিরঝিলের পরিবেশ নষ্ট করে
ডিএনসিসিকে হাতিরঝিলের দায়িত্ব দেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন কিছু আমি শুনিনি। হাতিরঝিল তো কোনো নরমাল লেক বা খাল নয়। এটা একটা বিশেষায়িত প্রকল্প। এখানে রোড নেটওয়ার্ক করা আছে, ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস আছে, বাস নেটওয়ার্ক আছে। এখানে রাজউক তার নিজস্ব ৫১ একর জায়গা দিয়েছে। রাজউক তো এই প্রজেক্ট ইচ্ছা করলেই কাউকে দিয়ে দিতে পারে না বা ছেড়ে দিতে পারে না। এখানে রাজউকের নিজস্ব বিনিয়োগও আছে। এটা রাজউকের একটা পরিচিতি। সুতরাং কারও গর্বের বিষয় তো আর কেউ ছেড়ে দিতে পারে না। এখন সেনাবাহিনী যেভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে, সেটা তারা আউটসোর্সিং করেই করে এবং আউটসোর্সিংয়ের যেসব কোম্পানিকে তারা নিয়োগ করেছে, আমরা তাদেরকেই কন্টিনিউ করব আপাতত।’
ওয়াসাকে বারবার বলার পরও তারা এসব বর্জ্য নিজস্ব উপায়ে ব্যবস্থাপনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে হাতিরঝিলের পানি বিশুদ্ধ রাখা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে পানি দূষণ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এ সমস্যা সামনে রেখে হাতিরঝিলের মালিকানা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ডিএনসিসি। এজন্য আমি তাদের স্বাগত জানাই। কিন্তু এ ব্যাপারে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কিংবা রাজউকের কাছে কোনো পত্র পাঠায়নি
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘হাতিরঝিল হস্তান্তরের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। সিটি করপোরেশন আমার অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান। সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর হলে আমি সেটা বলতে পারব, তার আগে কিছু বলতে পারব না। এটা কীভাবে আছে, সেটা দেখতে হবে। যদিও সেনাবাহিনী হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণ করে, তবে এটা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন। সেনাবাহিনী এটা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করবে কি-না, সে বিষয়ে আমি জানি না।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে অনেকগুলো খাল সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও কিছু খাল হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। সেনাবাহিনী হাতিরঝিলকে গণপূর্তের কাছে হস্তান্তর করলে আমরা হয়তো বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পারব। পরবর্তী সভাগুলোতে এটা আলোচনায় নিতে পারব; যে এটা কার কাছে থাকবে এবং কীভাবে হবে। গণপূর্তের কাছে সেনাবাহিনী হস্তান্তর করবে কি-না, সেটা আমার মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তাই আমি সম্পূর্ণভাবে বিষয়টি সম্পূর্ণ অবহিত না।’
দীর্ঘ সময় ও অর্থ ব্যয় করেও হাতিরঝিলের পানি দূষণ ঠেকানো যায়নি
এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া মেলেনি। তাকে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও জবাব আসেনি।
হাতিরঝিলের এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড বিল্ডিং ডিজাইন প্রকল্পের টিম লিডার স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘প্রকল্পটি মূলত রাজউকের, সেনাবাহিনীর নয়। সেনাবাহিনী ছিল এটার কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রাকটর। সেই হিসেবে প্রকল্প পরবর্তী তত্ত্বাবধানের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনী চলে যাওয়া মানে এটা প্রকল্প মালিকের কাছে ফেরত যাচ্ছে, রাজউক থেকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সেটা প্রত্যাহার হচ্ছে। আসলে নিজেদের জিনিস ফেরত নিচ্ছে রাজউক। তবে উত্তর সিটি করপোরেশন এটা চাচ্ছে এবং এটা যৌক্তিক।’
তিনি বলেন, ‘রাজউক প্রকল্প বন্দোবস্ত এবং পরিচলনার সক্ষমতা রাখে না। কারণ হাতিরঝিলের মতো প্রকল্পের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। একটা রক্ষণাবেক্ষণ, আরেকটা নিরাপত্তা ও গার্ডেনিং। এগুলো রাজউকের দ্বারা করা সম্ভব নয়। কারণ রাজউকের এই এখতিয়ার নেই। কারণ রাজউক তো পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ করে। ফলে পুরোটাই সিটি করপোরেশনের কাজ।’
ইকবাল হাবিব আরও বলেন, ‘হাতিরঝিলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ফলে সিটি করপোরেশনের হাতেই এটা দেয়া উচিত। এতে সিটি করপোরেশনের পক্ষে এর নিরাপত্তা বিধান, এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে জনসম্পৃক্ত করা, ট্রাফিকসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বৃক্ষরোপণ, লালন ও পরিচর্যা করা এবং হাতিরঝিলের পানি ঠিক রেখে এর ভেতর যে সেবাগুলো আছে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা অনেক সহজতর। কারণ সিটি করপোরেশন একটি সেবাদানকারী সংস্থা, রাজউক নয়। আমরা প্রত্যাশা করি, সেনাবাহিনী চলে গেলে রাজউকের উচিত এটা দ্রুত সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা।’
হাতিরঝিল রক্ষণাবেক্ষণে প্রস্তুত রাজউক
‘সেনাবাহিনী বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে হাতিরঝিলের ব্যবস্থাপনা করছে, আমি এই কথার সঙ্গে একমত। সেনাবাহিনী যদি সেটাও করে, তাহলে সেই কাজটা সিটি করপোরেশনের পক্ষে যৌক্তিক। কারণ সিটি করপোরেশন জনসম্পৃক্ত একটি সংগঠন, তাদের কাউন্সিলর রয়েছে। পরিচ্ছনতাকর্মী নিজেদেরই আছে। রাজউকের এসব বিষয় নেই; যা করবে বাইরের লোক লাগবে’—বলেন এ স্থপতি।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, ‘হাতিরঝিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজউকের মালিকানাধীন। সেনাবাহিনীর ১৭ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পটি ২০১৯ সালে সমাপ্ত হয়েছে। একই প্রতিষ্ঠান জুন ২০১৯ থেকে জুন ২০২১ মেয়াদে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হাতিরঝিলের পানি শোধন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আগামী ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণের ভার রাজউকের কাছে বর্তাবে। এ অবস্থায় হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পরিচালনা করবে রাজউক। প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংস্থাটি হাতিরঝিল রক্ষণাবেক্ষণে বাধ্য এবং তাদের সে প্রস্তুতি রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ কথা সত্য যে দীর্ঘ সময় ও অর্থ ব্যয় করেও হাতিরঝিলের পানি দূষণ রোধ করা যায়নি। এজন্য শুধু রাজউক দায়ী নয়। বর্ষাকালে ভারি বর্ষণের ফলে ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ লাইন প্লাবিত হয়। এতে জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়। তখন বাধ্য হয়ে আমাদের ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ লাইনের গেট হাতিরঝিল প্রান্তে খুলে দিতে হয়। ফলে ময়লা আবর্জনা সমেত দূষিত পানি হাতিরঝিলে প্রবেশ করে এবং ব্যাপক মাত্রায় পানি দূষণ করে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ওয়াসাকে বারবার বলার পরও তারা এসব বর্জ্য নিজস্ব উপায়ে ব্যবস্থাপনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে হাতিরঝিলের পানি বিশুদ্ধ রাখা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে পানি দূষণ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এ সমস্যা সামনে রেখে হাতিরঝিলের মালিকানা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ডিএনসিসি। এজন্য আমি তাদের স্বাগত জানাই। কিন্তু এ ব্যাপারে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কিংবা রাজউকের কাছে কোনো পত্র পাঠায়নি।’
শরীফ আহমেদ বলেন, ‘ডিএনসিসি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। তারা হাতিরঝিলসহ যে কোনো স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি, হাতিরঝিলের মালিকানা রাজউক থেকে ডিএনসিসির কাছে ন্যস্ত করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। হাতিরঝিলের পানি দূষণ রোধে ওয়াসা, রাজউক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সবার কাজের মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। শুধু মালিকানা হস্তান্তরে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।’