করোনা শনাক্ত ও চিকিৎসাসেবা দিতে আগ্রহী বেসরকারি হাসপাতাল
প্রকাশ :
ব্যাপক মৃত্যুর হুমকি নিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনা। আমেরিকা, ইতালি, ইরান, স্পেনসহ কিছু কিছু দেশ ও অঞ্চলে এর প্রকোপে মৃত আর আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে করোনা ভাইরাস মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আর করোনা ভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়লে সরকারি হাসপাতালগুলো দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। এমন অবস্থার মধ্যে করোনা প্রতিরোধে সেবা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। এখন থেকে আগামী তিন মাস করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতাল সরকারি নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত অনেক বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এটাকে খুবই ভালো প্রস্তাব হিসেবে আখ্যায়িত করে তা সরকারের গ্রহণ করা উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিসিডিও) সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা সরকারের অংশীদার, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি। আড়াই মাস আগেই সরকারের কাছে আমরা করোনা রোগীদের সেবা দিতে আগ্রহের কথা জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পিপিই দেওয়া হয়নি। তবে আমরা পিছিয়ে নেই। হাসপাতাল মালিকদের বলা হয়েছে ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের নিরাপত্তাসামগ্রী দিতে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। অনেক বেসরকারি হাসপাতালে অত্যাধুনিক আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব বেডের সঙ্গে বাথরুম ও গোসলখানাও রয়েছে।
অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, দেশে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে ১৪ হাজার। এসব হাসপাতালে ৮০ হাজার বেড রয়েছে। ৮৮ হাজার ডাক্তার এসব হাসপাতালে সেবা প্রদান করেন। এর মধ্যে ২৮ হাজার সরকারি ডাক্তার, বাকি ৬০ হাজার বেসরকারি ডাক্তার। তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেয়নি। ইতিমধ্যে দুই জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের ব্যাপকভাবে সেবা প্রদান শুরু হলে মানুষের হয়রানি আর থাকবে না বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল জানান, আমেরিকা, ইতালিসহ বিশ্বের অনেক দেশেই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর যৌথ উদ্যোগে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা চলছে। বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা খুবই ভালো প্রস্তাব। সরকারের উচিত এই প্রস্তাব গ্রহণ করে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব এনেস্থেসিওলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, আমেরিকা, ইতালিসহ বিশ্বব্যাপী মনিটরিং করে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ সোসাইটি অব এনেস্থেসিওলজিস্ট। আইসিইউ ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকেন এনেস্থেসিওলজিস্টরা। ট্রেনিংপ্রাপ্তসহ বাংলাদেশে মোট এনেস্থেসিওলজিস্ট আছেন ১ হাজার ২০০। এদের শিফটের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত করতে হবে। নইলে ব্যাপক হারে করোনা দেখা দিলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ইতালিতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১১ ভাগের আইসিইউ সুবিধা লাগছে। আমেরিকায় লাগছে ১০ ভাগ। বাংলাদেশে ৫ ভাগের ওপরে লাগতে পারে। তাই জনবল রিজার্ভ রাখতে হবে।
এদিকে আইইডিসিআরের রয়েছে জনবলের সংকট। হটলাইনে ফোন রিসিভ করার মতো পর্যাপ্ত জনবল প্রতিষ্ঠানটির নেই। বিষয়টি স্বীকার করেছেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন। সেখানে আরো জনবল দেওয়া হলে সেবাপ্রার্থীদের যথাসময়ে তাদের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
করোনার উপসর্গ থাকা রোগীর মৃত্যুর খবর আসছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা না থাকাতেই এমন ঘটনা ঘটছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সমন্বয়ে এখনই বিশেষায়িত হাসপাতাল করতে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে তারা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোও এগিয়ে এসেছে। আমাদের দেশেও তা হওয়া উচিত। ?করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেশের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, নির্ধারিত বিশেষায়িত চিকিত্সাকেন্দ্র এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড বা রোগসঞ্চার থেকে প্রথম লক্ষণ দেখা দেওয়ার সময় (সুপ্তাবস্থা) কমপক্ষে ১৪ দিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কারণে আগামী দুই সপ্তাহ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা বলছেন, এরই মধ্যে যদি কেউ সংক্রমিত হয়ে থাকেন, তাহলে তার লক্ষণ প্রকাশ পাবে আগামী কয়েক দিনে। এ কারণে এখনই বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
চিকিত্সা নৃবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সাধারণত সংক্রমণ শুরুর পর তৃতীয় সপ্তাহ থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে এবং চতুর্থ সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক বাড়তে থাকে। এ কারণে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।’