, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

‘ভেবেচিন্তে অমন ইনিংস খেলা যায় না’

  স্পোর্টস ডেস্ক

  প্রকাশ : 

‘ভেবেচিন্তে অমন ইনিংস খেলা যায় না’

এক-দুইটি নয়, ছয়টি ট্রফি হাতছাড়ার হাহাকার ছিল টাইগারদের। এমনও রটে গিয়েছিল যে, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি, কোন আসরের ফাইনালে পারে না বাংলাদেশ। এর মধ্যে দেশের মাটিতেও আছে না পারার বেদনা। অবশেষে গতবছর সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে সে অপবাদ ঘুচেছে। তিন জাতি ট্রফি জিতেছে বাংলাদেশ।


ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথম ফাইনাল জয়ের উল্লাসে মেতে উঠেছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। বংলাদেশের বড় জয়, ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় সাফল্য মানেই পঞ্চপান্ডবের হাত ধরে আসা সাফল্য। কিন্তু প্রথম ট্রফি জয়ের সে ঐতিহাসিক ফাইনালে ঘটল ব্যতিক্রম। সে ফাইনালের ম্যাচসেরা পারফরমার ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।


৩৫ ম্যাচের ছোট্ট ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আগে কখনও ম্যাচসেরা হতে পারেননি। ঐ একবারই ম্যান অব দ্য ম্যাচ। আর সেটাই বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা জয়ের ম্যাচে। কাজেই দেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হতে না পারলেও, মোসাদ্দেক সৈকত কিন্তু ঠিকই ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে ফেলেছেন।


লক্ষ্য সহজ ছিল না। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টাইগারদের লক্ষ্য ছিল ২৪ ওভারে ২১০ রানের। যা তাড়া করতে নেমে ১৪৩ রানে ইনিংসের অর্ধেকটা খুইয়ে বিপাকে পড়ে মাশরাফির দল। ঐ অবস্থায় মাঠে নেমে মোসাদ্দেক ৫ ছক্কা ও ২ বাউন্ডারিতে খেলেন ২৭ বলে ৫২ রানের এক টর্নেডো ইনিংস। আর তাতেই ৫ উইকেট হাতে রেখে ৭ বল আগে অবিস্মরণীয় জয় পায় বাংলাদেশ। দলের সব প্রতিষ্ঠিত তারকাদের পেছনে ফেলে ম্যাচসেরা হন মোসাদ্দেক।


১৪ মাস পর সেই ফাইনাল সেরা হওয়ার পেছনের গল্প শোনালেন ময়মনসিংহের ছেলে মোসাদ্দেক। বৃহস্পতিবার রাতে নোমান মোহাম্মদের ইউটিউব লাইভে মোসাদ্দেক জানিয়ে দিলেন, আসলে বলে-কয়ে অমন ইনিংস খেলা যায় না। ফাইনালে তিনি অমন খেলে দল জিতিয়ে রাজ্যজয়ী বীরের মত সাজঘরে ফিরবেন- এমন পরিকল্পনা আগে থেকে করার উপায় ছিল না।


আসলে দিনটি ছিল তার। ভাগ্য ছিল অনুকূলে। তাই দলের সাফল্যে কার্যকর অবদান রাখা সম্ভব হয়েছে। সৈকতের ভাষায়, ‘প্রথম ট্রফি জয়ের ম্যাচে ম্যাচসেরা। অবশ্যই সৌভাগ্যবান। ছয়-ছয়টি ফাইনাল হেরেছি বলে, এমন না যে, আর কখনও ট্রফি জিতব না। তবে আমি ঐ সময় একটা অবদান রাখতে পেরেছি, ঐ জয়ে আমার অবদান ছিল- সেটা আমার জীবনে অনেক বড় পাওয়া।’


‘(নামার আগে) ঐভাবে কিছু চিন্তা করিনি। তবে একটা চিন্তা ছিল যে তখন স্ট্রাইকরেট একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। নিশ্চিতভাবেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে। আমার যেসব শক্তির জায়গা আছে, যেসব শট আমি একটু ভাল খেলতে পারি, চিন্তা ছিল সেগুলো খেলে স্ট্রাইকরেট বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। তবে সেটা যে আগে থেকে খুব সাজানো গোছানো ও পরিকল্পনা করে খেলা- তা ছিল না। অমন একটা ফাইনালে যে আগে থেকে ভেবে-চিন্তে করে খেলা যায়, আমি তা ভাবি না। তাই বলছি আমি লাকি।’


বলে রাখা ভাল, মোসাদ্দেক যখন উইকেটে যান তখনও বাংলাদেশ জয় থেকে ৬৭ রান দূরে, বল বাকি ছিল ৫০টি। এরকম অবস্থায় ইনিংসের অর্ধেকটা খুইয়ে জয়ের চিন্তাটা কিভাবে মাথায় এসেছিল? সঞ্চালক নোমান মোহাম্মদের সে প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র পার্টনার ও তার শহর ময়মনিসংহের অগ্রজ প্রতিম মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কথাও স্মরণ করলেন মোসাদ্দেক।


তার ভাষায়, ‘আসলে আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার খুব ছোট। ম্যাচও খেলেছি কম। আমার পার্টনার ছিলেন রিয়াদ ভাই। তিনি অনেক অভিজ্ঞ, পরিণত এবং বেশ কিছু ম্যাচ জেতানো ইনিংস আছে তার। আমার একটা বিশ্বাস ছিল যে, রিয়াদ ভাই আছেন এক প্রান্তে, আমি এ প্রান্তে চেষ্টা করি। মেরে খেলি, পারলে পারব, না হয় আউট হয়ে যাব। এই ভেবে আসলে হাত খুলে খেলা। আর সে চেষ্টা সফলও হয়েছে।’

  • সর্বশেষ - খেলাধুলা