ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনালের রায়ে এই প্রথম যুবকের ৬ বছরের কারাদণ্ড
প্রকাশ :
ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনালের ১৫৬/২০২১ মামলার রায়ে আলাউদ্দিন সানি (২৬) নামের এক যুবককে ৫ বছর ৮ মাস ১০ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। বিজ্ঞ বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাঃ বজলুর রহমান মঙ্গলবার (৭ জুন) এ রায় প্রদান করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী সানি পলাতক। গ্রেফতার অথবা আত্মসমর্পণের পর থেকে তার সাজা কার্যকর হবে বলে বিজ্ঞ বিচারক রায়ে উল্লেখ করেছেন। ০৪-০৪-২০২১ তারিখ ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার শেষে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় এই প্রথম মামলার রায়ে আসামীকে কারাদণ্ড প্রদান করা হলো। এর আগে অন্তত: ১৫টি মামলার রায় হলেও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামীরা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ৩ টি পৃথক ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামী সানিকে ৫ বছর ৩ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ৫ মাস ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত সানি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার রাউতখলা গ্রামের মোঃ মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। তার বর্তমান ঠিকানা ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দরিরামপুর।
সূত্র জানায়, আসামী আলাউদ্দিন সানির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ১৮(২) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ৩ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২৫(২) ধারায় ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ৩১(২) ধারায় ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। সূত্র মতে, আসামীকে প্রদত্ত সাজার মেয়াদ ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৫ ধারা অনুযায়ী একই সাথে কার্যকর হবে। কার্যবিধির ৩৫(এ) ধারা অনুযায়ী আসামীর হাজতবাস সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে। অন্যদিকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ ধারা অনুযায়ী আসামীর কাছ থেকে অর্থদণ্ড আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ময়মনসিংহের ডেপুটি কালেক্টরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বাদী শ্রাবনী আক্তারের (২২) সাথে ৩১-১২-২০১৯ তারিখ আলাউদ্দিন সানির বিয়ে হয়। বিয়ের পর শ্রাবনী জানতে পারেন সানি বিবাহিত এবং সন্তান আছে। বনিবনা না হওয়ায় ০৭-০৩-২০২০ তারিখ তাদের ডিভোর্স হয়। এর পর থেকেই সানি সাবেক স্ত্রী শ্রাবনী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে কুটুক্তি করে আসছিলেন। তার কাছে সাবেক স্ত্রীর ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড থাকার সুযোগে আইডি ব্যবহার করে শ্রাবনী ও তার বাবা-মার ছবিসহ মোবাইল নম্বর যুক্ত করে অশ্লীল কথাবার্তা লিখে পোস্ট দিয়ে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করেন। বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে ভুক্তভোগী শ্রাবনী আক্তার ত্রিশাল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৮(২), ২৫(২), ২৬(২), ২৯(১) ও ৩১(২) ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর: ৯, তারিখ ০৬-০৬-২০২০। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ০৭-০৬-২০২০ তারিখ আলাউদ্দিন সানিকে গ্রেফতার এবং ডিভাইস উদ্ধার করে আদালতে প্রেরণ করেন। তিনি আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন। দীর্ঘ ২ মাস ১২ দিন হাজতবাসের পর সানি শর্ত সাপেক্ষে জামিনে ছাড়া পান। পরে কয়েকটি হাজিরা দিয়ে পলাতক হন। রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি মসিউর রহমান ফারুক মামলাটি পরিচালনা করেন।
ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনাল থেকে ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর ও জামালপুর জেলার মানুষ আইনী সহায়তা পেয়ে থাকেন। এর আগে এই ৪ জেলার মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে দূর্বিষহ দূর্ভোগের মধ্য দিয়ে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে গিয়ে আইনী সহায়তা নিতেন। বিশ্লেষকদের মতে, মামলার বাদী, বিবাদী এবং সাক্ষীরা ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনাল থেকে শতভাগ আইনী সুবিধা পাচ্ছেন। ট্রাইব্যুনালে মামলার চার্জশিট গ্রহণের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হচ্ছে। মামলা জট শূন্যের কোটায়। সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশেষজ্ঞ জানান, মঙ্গলবার ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক প্রদত্ত রায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে মানুষকে আরও সচেতন করবে। তিনি বলেন, সাইবার ক্রাইম কমাতে হলে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।