, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

মুক্তাগাছায় ৩২৯ টন চাল আত্মসাতের ঘটনায় আরেকটি কমিটি গঠন: জড়াবেন আরো ৮ জন

  শাহ মোহাম্মদ রনি

  প্রকাশ : 

মুক্তাগাছায় ৩২৯ টন চাল আত্মসাতের ঘটনায় আরেকটি কমিটি গঠন: জড়াবেন আরো ৮ জন

ময়মনসিংহ বিভাগের আলোচিত মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের ১ কোটি ৭১ লাখ ৯২ হাজার ৩৮২ টাকা মূল্যের চাল ও খালি বস্তা আত্মসাতের ঘটনায় আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী বৃহস্পতিবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। আত্মসাতের ঘটনায় মূল আসামি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ-এর সঙ্গে জড়াবেন আরো ৮ কর্মচারী। এদের মধ্যে আলোচিত সহকারী উপ খাদ্য পরিদর্শক তুহিন ও ৭ জন নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছেন। এর পরই তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে দ্রুত এগিয়ে চলছে দুদকের দায়ের করা মামলার তদন্ত। সূত্র মতে, গত ২ এপ্রিল দৈনিক খোলা কাগজ ও দৈনিক জাগ্রত বাংলার প্রথম পৃষ্ঠায় খবর প্রকাশের পর খাদ্য অধিদপ্তর মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের রেকর্ডপত্র অনুসন্ধান করে অন্যান্য দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রককে নির্দেশ প্রদান করে। এদিকে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মোঃ শাখাওয়াত হোসেন সোমবার ময়মনসিংহ ও টাংগাইলের মধুপুর স্টীল সাইলো পরিদর্শন করেন।
জানা যায়, সাইলো পরিদর্শনের সময় অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাইলোর প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম সেখ ছাড়াও অন্যান্য কর্মকর্তারা মহাপরিচালকের সাথে ছিলেন। সকাল ১০ টায় তিনি ময়মনসিংহ সিএসডিতে অবস্থিত ৪৮ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার স্টীল সাইলোতে পৌঁছান। ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম, সাইলোর অধীক্ষক মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান শিবলী ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আব্দুল কাদের তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে তিনি দুপুর সাড়ে ১২ টায় মধুপুর স্টীল সাইলো পরিদর্শনে যান। টাংগাইলের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ তানভীর হোসেন ও সাইলোর ভারপ্রাপ্ত অধীক্ষক মোঃ রাকিবুল মাহফুজ মহাপরিচালককে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় তিনি সাইলোতে চাল সংরক্ষণের সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা নেন। উভয় সাইলো পরিদর্শনের সময় তিনি কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন এবং আগামী বোরো চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জন ও গুণগত মান নিশ্চিত করার কঠোর নির্দেশ প্রদান করেন।
সূত্র জানায়, দৈনিক খোলা কাগজ ও দৈনিক জাগ্রত বাংলায় খবর প্রকাশের পর খাদ্য অধিদপ্তর মুক্তাগাছায় চাল ও খালি বস্তা আত্মসাতের ঘটনায় কঠোর হয়। অধিদপ্তর থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আব্দুল কাদের ১৬ এপ্রিল ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। হালুয়াঘাটের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ হাসান আলী মিয়া কমিটির প্রধান। ময়মনসিংহ সদরের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আশরাফুল আলম ফাহিম ও ফুলবাড়িয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস. এম. সালাহ্ উদ্দিন কমিটির সদস্য। কমিটি গত রবিবার দিনব্যাপী মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের সব রেকর্ড অনুসন্ধান এবং ফটোকপি সংগ্রহ করে। মঙ্গলবার ও বুধবার তদন্ত কাজ শেষ করে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এর পরই অন্যান্য দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ পালিয়ে যাওয়ার আগে ৩ মাসের মধ্যে যেকোনো সময় ৩২৮ টন ৯৮০ কেজী চাল ও ১ হাজার ৮৭৫টি খালি বস্তা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। ওই সময় গুদামের বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন সহকারী উপ খাদ্য পরিদর্শক তুহিন, নিরাপত্তা প্রহরী নূরুল হক, রাজু আহম্মেদ, জুলহাস উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, লায়লা বিলকিস ও হাসিনা আক্তার এবং পরিচ্ছন্ন কর্মী স্বপন চন্দ্র দাস। এদের মধ্যে তুহিন ও নূরুল বীরদর্পে গুদামের সব দায়িত্ব পালন করতেন। বেশি বয়সের কারণে গুদামে যেতেন না লায়লা ও হাসিনা।
সূত্র জানায়, আত্মসাতের দায় এড়াতে এর আগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ উঠে। আত্মসাত ধরা পড়ার ৪ মাস পর দুর্নীতিবাজ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা রুবীকে টাংগাইলের মির্জাপুরে বদলি করা হয়। ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় বদলি করায় প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দেশের অন্যান্য খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা আত্মসাত, দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়ানোর উৎসাহ পেয়েছেন। অথচ এ ধরণের আত্মসাতের ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার শতভাগ নজির রয়েছে। এর আগেও ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকটি খাদ্য গুদামে চাল ও খালি বস্তা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। জড়িতরা আটক হয়ে কারাভোগ, চাকরিচ্যূত ও বিভাগীয় মামলায় পড়েন।


  • সর্বশেষ - আলোচিত খবর