, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

মিলু শামসের দুটি কবিতা

  সাহিত্য ডেস্ক

  প্রকাশ : 

মিলু শামসের দুটি কবিতা

হোমো সেপিয়েন্স


আজকাল সিনেমা দেখতে বসলে

কাহিনী অতিক্রম করে চোখ যায়

সেলুলয়েডের বাইরে-

গোছানো গল্পের আড়ালে

সেট, লাইট, শ্যুটিংস্পট ইত্যাদিতে।

পোলানস্কির ‘পিয়ানিস্ট’ এর

ইহুদি বাদকের দমবন্ধকর লুকিয়ে থাকা,

বাইরে নাৎসি বাহিনীর কামান, বোমার

ঝোড়ো গর্জন,

মুড়ি মুড়কির মতো মানুষ মারা;

হলিউডের ক্ল্যাসিক মেলোড্রামা

‘সাউন্ড অব মিউজিক’ এর

ক্যাপ্টেন ভন ট্র্যাপ ও মারিয়া অগাস্টার

দুর্দান্ত রোমান্টিক গান

প্রেম ও ঘনিষ্ঠতার আড়ালে উঁকি দেয়

অপূর্ব লোকেশন ও সেট

আবছা রাতের আবহ ফুটিয়ে তোলার দক্ষ কারিকুরি।

স্পিলবার্গ কিংবা সত্যজিৎ, মৃণালের বেলায়ও

একই ব্যাপার-

অভিনয়ের আড়াল সরিয়ে

গলা বাড়ায় বস্তুজগৎ।

ঘোরতর সংকট-

মিকেল্যাঞ্জেলোর ভেভিড সরে গিয়ে

বেরিয়ে পড়লে পুরুষের নগ্নদেহ,

মেরি ম্যাকডেলিনের কোলে

যিশুর নিথর শরীর হয়ে গেলে

ভাস্করের কাদামাটির স্তূপ;

শিল্প বিদায় নেয় যদি

মানুষের মন ও মগজ থেকে-

পৃথিবী কি তবে হেঁটে যাবে আবার

আট লাখ বছর আগে

হোমো সেপিয়েন্স যুগে?

শনাক্তহীন

কলাবতী ফুলের প্রসঙ্গ এলে

বিলুপ্ত জনপদের মতো

মানসচক্ষে ভাসে

বহুবর্ণী এক পুরোনো ফুলের বাগান;

পটভূমিতে

শিল্পীর তুলিতে আঁকা

স্বচ্ছ ছবির মতো

সাদা চুনকাম করা

ছিমছাম দোতলা বাড়ি।

পড়ন্ত বেলায়

আরাম কেদারায় বসা

বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য

মালিদের বাগান পরিচর্যার

তদারকি রত,

চোখেমুখে তার ঠিকরে পড়ে

ফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য মাখা

সুখ সুখ অনুভব।

কলাবতী ফুলের প্রসঙ্গ এলে

তথ্যসূত্রের মতো

এই পুরো দৃশ্য মানসচক্ষে

ভেসে উঠলেও

বর্তমান ফুলবিষয়ক গবেষণা থেকে

তাদের রঙ রূপ বর্ণ-বৈচিত্র্য

একে একে মুছে যায়,

চিত্রকল্পের গায়ে

ফুটে ওঠে

নাতিদীর্ঘ বাজারি ফর্দ,

সেখানে বাগানের প্রকট অনুপস্থিতিতে

ফুলগুলো সব

একই মাপ ও আকারে

বিন্যস্ত হয়ে পড়ে থাকে।

কলাবতী ফুলের প্রসঙ্গ এলে

এখন আর কলাবতী কিংবা দোপাটি

গন্ধরাজ বা নয়নতারাকে

তাদের নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে

আলাদাভাবে শনাক্ত করা যায় না।

  • সর্বশেষ - সাহিত্য