1 November 2024, 07:03:43 AM, অনলাইন সংস্করণ

জায়েদ হোসাইন লাকী : সাহিত্য-সংস্কৃতির নিবেদিত প্রাণ

  সাহিত্য ডেস্ক

  প্রকাশ : 

জায়েদ হোসাইন লাকী : সাহিত্য-সংস্কৃতির নিবেদিত প্রাণ
16px

শাহীন রেজা

জায়েদ হোসাইন লাকী নব্বই দশকের একজন প্রতিভাবান কবি। যদিও তিনি এ সময়ে এসে ঝলসে উঠেছেন এবং আলোচিত হচ্ছেন বিভিন্ন সাহিত্য মহলে। তার কবিতার একজন মুগ্ধ পাঠক হিসেবে বলতে পারি, তিনি সমকালকে ধারণ করে পরম একাগ্রতায় সমৃদ্ধ আগামীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমি একান্তভাবে বিশ্বাস করি, যে কবিতা অন্যকে ছুঁয়ে যেতে পারে না; তা কবিতা নয়। জায়েদ হোসাইন লাকীর কবিতা আমাকে ছুঁয়ে যায় বলেই সেগুলোকে আমি কবিতা বলি। একই কারণে এর রচয়িতাকে আমি কবি হিসেবেই গণ্য করি।

জায়েদ হোসাইন লাকী একজন সারল্যে নিমজ্জিত আবেগাক্রান্ত মানুষ। তার আবেগ খুব দ্রুত অন্যকে আক্রান্ত করে। আমি তার কবিতাকে যেমন পছন্দ করি; তেমনই ভালোবাসি তাকে। কবিতার ভারে নুয়ে যেতে যেতে কবি জায়েদ হোসাইন লাকী স্বপ্নের তীর্যক সমীকরণে কবি প্রতিভায় ঘটিয়েছেন উত্তরাধুনিক এক উৎকৃষ্ট বৃষ্টিপাত। করাত কলের শব্দেরা তার হাতে উঠে এসেছে বর্ষাধুমাল রাত হয়ে। আবার অনাগত সময় বৃথা যাবে না তো? বলে তিনি অপেক্ষোয় আছেন সুসময়ের বৃষ্টিপাতের জন্য। বিরহী প্রেমিকারা তাকে জুজুর মতো লেলিহান জিহ্বা নেড়ে ভয় দেখালেও তিনি ভয় না পেয়ে হেসে উড়িয়েছেন অবলীলায়।

জায়েদ হোসাইন লাকীর জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং কবি হয়ে ওঠার নেপথ্য গল্প যেনে নেওয়া ভালো। তার জন্ম ১৮ জুলাই ১৯৭৫ সালে ঢাকায়। বাবা মরহুম কে এম তোফাজ্জল হোসাইন সরকারের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড অফিসার, লেখক, কলামিস্ট, ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মা মরহুমা সুফিয়া বেগম। স্ত্রী নুরুন নাহার শ্রাবণী কবি, ছড়াকার, সংগঠক, শিক্ষক ও গৃহিণী। এ কবি দম্পতির দুই কন্যাসন্তান সাদিয়া মিকি এবং রোজা মুসকান। লাকীর পৈতৃক বাস ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার গজারিয়া গ্রামে। তিনি ১৯৯৯ সালে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস করেছেন। এ ছাড়াও ‘মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা’য় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা (২০১১) করেছেন। কম্পিউটার সায়েন্স এবং টেকনোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে।

লাকী এনজিও পেশায় চাকরি জীবন শুরু করেন এবং দীর্ঘ ১৮ বছর বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থায় উচ্চপদে চাকরি করেছেন। গোপালগঞ্জের সরকারি মুকসুদপুর কলেজ ছাত্রসংসদ থেকে ‘জিএস’ পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন ১৯৯৩ সালে। একটি ছাত্র সংগঠনের উপজেলা পর্যায়ে এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে শীর্ষ পদে ছিলেন দীর্ঘদিন। প্রথাগত রাজনীতি থেকে সরে আসেন ২০০৩ সালে। ১৯৮৮ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরে তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। প্রথম গ্রন্থ ১৯৯২ সালে। তার প্রকাশিত গ্রন্থ মোট ১৫টি। ১৯৯৫ সালে তার সম্পাদনায় সাহিত্য পত্রিকা ‘মুক্তি’ ঢাকার স্বামীবাগ থেকে প্রকাশিত হয়। এরপর প্রকাশিত হয় আরও ৯টি লিটল ম্যাগ। লেখক হিসেবে ১৯৯৬ সালে তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি’ প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় কোষগ্রন্থ (এনসাইক্লোপিডিয়া) ‘বাংলাপিডিয়া’য়। গ্রন্থটি মোট ১৪ খণ্ডে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় মুদ্রিত হয়।

লেখালেখির পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন ধরে টিভি নাটক প্রযোজনা ও পরিচালনা করে আসছেন। নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘রাজশ্রী ফিল্মস’র ব্যানারে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ১৯টি ডকুমেন্টরি, ১১টি নাটক, কিছু টিভি বিজ্ঞাপনচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র এবং মিউজিক ভিডিও বানিয়েছেন। ২০১৮ সালে মেরিল-প্রথম আলো আগামীর নির্মাতা প্রতিযোগিতায় তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালকের তালিকায় ছিলেন। নাটক, ডকুমেন্টরি নির্মাণের পাশাপাশি তিনি দেশের জনপ্রিয় দুটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সংবাদ পাঠ করেছেন কিছুদিন। আবৃত্তি, উপস্থাপনা ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে ‘সাহিত্য দিগন্ত’ নামে তার একটি টিম আছে। যা ঢাকার সাহিত্য অঙ্গনে খুবই পরিচিত। সাহিত্য দিগন্ত টিম থেকে তার নেতৃত্বে ও উপস্থাপনায় গত ৩ বছরে (২০১৯-২০২১) মোট ৭১টি অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।

তার ‘ফ্রেন্ডস অব হিউমেনিটি বাংলাদেশ’ এবং ‘কনসার্নড উইমেন ফর রেপ প্রিভেনশন’ নামে দুটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে। সংগঠন দুটির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্বরত। ‘ফ্রেন্ডস অব হিউম্যানিটি বাংলাদেশ’র মাধ্যমে তিনি এবং তার টিমের বন্ধুরা গত ৫ বছরে ৯,৫৫৩ জন হতদরিদ্র মানুষকে খাদ্য, বস্ত্র এবং ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। এ প্রকল্পের কাজ বর্তমানেও চলমান। তিনি সাহিত্য পত্রিকা ‘ত্রৈমাসিক সাহিত্য দিগন্ত’র সম্পাদক ও প্রকাশক। এ ছাড়াও সাপ্তাহিক ‘অপরাধ সূত্র’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক, দৈনিক ‘বাঙ্গালীর কণ্ঠ’ পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক এবং সাপ্তাহিক গণবার্তা পত্রিকার সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

তার সম্পাদিত ছোট কাগজগুলোর মধ্যে মুক্তি, মানবজীবন, জাগরণ, মানচিত্র, সময়, ভূমিপত্র, বাংলাকাগজ ও কালেরবৃক্ষ উল্লেখযোগ্য। ‘মনোভূমি’ নামে তার একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছিল, এখন নেই। তিনি নিয়মিত লিখছেন শব্দনীড়, উইবলি, বিডিনিউজ, সামহোয়ার ইন ব্লগসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। লেখালেখির অর্জন হিসেবে তিনি ‘অধ্যাপক সত্যেন বোস সাহিত্য পুরস্কার-২০১১, আমরা করব জয় সাহিত্য পুরস্কার-২০১৪, জাতীয় সাহিত্য পুরস্কার-২০১৬, সাপ্তাহিক খোলাচোখ সাহিত্য সম্মাননা-২০১৮ পেয়েছেন। তিনি জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের একজন নিবন্ধিত লেখক। ২০২১ সালে তিনি জাতিসংঘের নিবন্ধিত ও অনুমোদিত ‘ওয়ার্ল্ড লেটারারি ফোরাম ফর পিচ অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ ভুটান থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডর অব পিচ’ নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ‘ঢাকা সাহিত্য পরিষদ’র বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির আহ্বায়ক।

আজ ১৮ জুলাই তার ৪৬তম জন্মদিনে একজন অগ্রজ কবি হিসেবে তার জন্য রইল এক আকাশ শুভাশিষ আর এক সমুদ্র ভালোবাসা। তার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

লেখক : কবি, কথাসাহিত্যিক, মিডিয়াব্যক্তিত্ব এবং সম্পাদক দৈনিক মুক্ততথ্য, সম্পাদক সাপ্তাহিক বৈচিত্র।

  • সর্বশেষ - সাহিত্য