, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

যেসব কারণে হেপাটাইটিস হতে পারে, জেনে নিন করণীয়

  ফিচার ডেস্ক

  প্রকাশ : 

যেসব কারণে হেপাটাইটিস হতে পারে, জেনে নিন করণীয়

২৮ জুলাই পৃথিবীতে পালিত হচ্ছে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। দিবসটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে অন্যতম আটটি অফিসিয়াল পাবলিক হেলথ বিষয়ক দিবসের মধ্যে একটি। দিবসটির মূল উদ্দেশ্যই হলো—বিশ্বে হেপাটাইটিস এবং এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা। বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিসের ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং বাস্তবিক পরিবর্তনকে প্রভাবিত করার জন্য এবারের বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো—‘Hepatitis can’t wait’।

সাধারণ কথায় লিভার তথা যকৃতের প্রদাহকে বলা হয় হেপাটাইটিস। কোনো ব্যক্তির হেপাটাইটিস হওয়ার অসংখ্য কারণ থাকতে পারে। তবে এর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—বিভিন্ন ধরনের হেপাটোট্রপিক ভাইরাস। এ ধরনের ভাইরাস সরাসরি যকৃতকে সংক্রমিত করে এবং যকৃতেই বংশবৃদ্ধি করে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, ই, জি ইত্যাদি হলো বিভিন্ন ধরনের হেপাটোট্রপিক ভাইরাস; যা বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিসের অন্যতম কারণ। বিভিন্ন হেপাটোট্রপিক ভাইরাস ছাড়াও কিছু নন হেপাটোট্রপিক ভাইরাস আছে, যারা হেপাটাইটিসের জন্য দায়ী। ইয়েলো ফিভার ভাইরাস, সাইটোমেগালো ভাইরাস, ইবস্টেইন-বার ভাইরাস প্রভৃতি এ ধরনের কিছু নন হেপাটোট্রপিক ভাইরাস। এসব ভাইরাস সরাসরি যকৃতকে আক্রমণ না করলেও শরীরে এদের রোগ সৃষ্টির কোনো না কোনো পর্যায়ে পরোক্ষভাবে যকৃতও আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া নোকার্ডিয়া, হেপাটিক এনাপ্লাজমা, ব্যাকটেরিয়াল সেপসিস ইত্যাদি কিছু ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও হেপাটাইটিসের জন্য দায়ী। মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ইত্যাদি কিছু কারণেও বিশেষত উন্নত বিশ্বে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি গর্ভাবস্থা, ইস্কেমিক হেপাটাইটিস, কিছু বিপাকীয় রোগ, যেমন- উইলসন’স ডিজিজ, হিমোক্রোমাটোসিস; আইসোনিয়াজিড, রিফামপিসিন জাতীয় যক্ষ্মাবিরোধী কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রভৃতি কারণেও হেপাটাইটিসের উদ্ভব হতে পারে।

হেপাটোট্রপিক ভাইরাসগুলোর মাঝে হেপাটাইটিস এ এবং ই ভাইরাস প্রধানত নোংরা ও দূষিত খাদ্য এবং পানির মাধ্যমেই ছড়ায়। অপরদিকে হেপাটাইটিস বি, সি এবং ডি ভাইরাস অনিরাপদ যৌনমিলন, অনিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন, ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরাপথে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ, একাধিক ব্যক্তির একই ব্লেড বা কাঁচি ব্যবহার, অনিরাপদ অস্ত্রোপচার, শরীরে ট্যাটু আঁকা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে ছড়াতে পারে। এমনকি সন্তান জন্মদানের সময় অনেক ক্ষেত্রে মা থেকে শিশুতেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। হেপাটাইটিস নিয়ে আসলে জনমনে রয়েছে নানা রকম আতঙ্ক আর বিভ্রান্তি। অনেকে যেমন নিজের অজান্তেই রক্তে এ রোগের জীবাণু বহন করে চলেছেন, আবার অনেকে এ সম্পর্কে হয়তো জানতে পারেন লিভার সিরোসিস জাতীয় জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার পর। সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ ও লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার জাতীয় জটিলতা তৈরি করে কেবল হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস। বিশ্বে হেপাটাইটিস বি অথবা সি আক্রান্ত প্রায় ৯০ শতাংশ লোকই জানে না যে, তারা এ ভাইরাস বহন করে চলেছে। ফলে না জেনেই তারা ভাইরাসটি আরও দ্রুত ছড়াতে থাকেন। বাংলাদেশেও প্রায় এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস-বি অথবা সি ভাইরাসে আক্রান্ত।

হেপাটাইটিস অল্প কিছু উপসর্গসহ এমনকি কোনো উপসর্গ ছাড়াও ঘটতে পারে। উপসর্গবিশিষ্ট হেপাটাইটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হতে পারে অনেকটা সাধারণ ফ্লুয়ের মত, যেমন- পেশী ও গিঁটে ব্যথা, উচ্চ তাপমাত্রা (৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড অর্থাৎ ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারও বেশি), শরীরে ম্যাজম্যাজে ভাব, মাথা ব্যথা ইত্যাদি। পরবর্তীতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জন্ডিস, ক্ষুধমান্দ্য, অসুস্থতাবোধ প্রভৃতি হেপাটাইটিসের লক্ষণ বা উপসর্গ হিসাবে ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়। অনেকে জন্ডিস ও হেপাটাইটিসকে সমার্থক মনে করেন। আসলে হেপাটাইটিসে জন্ডিস দেখা দিতেও পারে আবার নাও পারে। জন্ডিস হলো হেপাটাইটিসের বিভিন্ন উপসর্গের মাঝে একটি লক্ষণ, যা রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রার ক্রম-বৃদ্ধি জনিত যকৃতের কার্যক্ষমতার অবনতি নির্দেশ করে। রোগের বিস্তার বেশি ঘটলে বা ফালমিনেন্ট হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে পেটে পানি আসা, রক্ত বমি হওয়া এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তি হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি, প্রলাপ বকা এবং অচৈতন্য হয়েও পড়তে পারে।

রোগের স্থায়িত্বকালের ওপর ভিত্তি করে দুই ধরনের হেপাটাইটিস দেখা যায়—একিউট ও ক্রোনিক। তীব্র একিউট হেপাটাইটিস ৬ মাসের কম, অন্যদিকে দীর্ঘস্থায়ী ক্রোনিক হেপাটাইটিস ৬ মাসের বেশি সময়ব্যাপী এমনকি বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে। দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস খুবই বিপজ্জনক। সময়মতো যথাযথ চিকিৎসা না পেলে পোর্টাল হাইপারটেনশন, হেপাটোরেনাল সিন্ড্রোম, হেপাটোপালমোনারি সিন্ড্রোম, স্পনটেনিয়াস ব্যাকটেরিয়াল পেরিটোনাইটিস, লিভার সিরোসিস, ক্রোনিক লিভার ফেইলিউর, হেপাটোসেলুলার কারসিনোমা প্রভৃতির মত মারাত্মক কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে।

হেপাটাইটিস এ হলে সাধারণত জন্ডিস হয়, তবে সেটা শুরুতেই নয়। শুরুটা হয় সাধারণত জ্বর, বমি বা বমিভাব, ক্ষুধামান্দ্য, পেটের ডান পাশের ওপর দিকে একটু ব্যথা ইত্যাদি দিয়ে। ৩০-৩৫% হেপাটাইটিস এ রোগীর জন্ডিস হয়, বাকিরা টেরও পান না কবে, কোথায়, কীভাবে তাকে হেপাটাইটিস এ ভাইরাসে আক্রান্ত করল। হেপাটাইটিস এ ভাইরাস মূলত শিশুদের লিভারকে সহজে আক্রান্ত করে—বড়দের এটি দ্বারা খুব একটা আক্রান্ত হতে দেখা যায় না। সাধারণত ১৫ বছর বয়সের আগেই মানুষ এ ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয়। জীবনে একবার হেপাটাইটিস এ ভাইরাস সংক্রমণ হয়ে গেলে সারা জীবনের জন্য তার ওই প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের কার্যকর টিকা রয়েছে। সাধারণত যেসব রোগীর লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেইলিউর, ক্যানসারের মতো জটিল রোগ থাকে, তাদেরই হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের এ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে থাকে। হেপাটাইটিস এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সাধারণত নিজে থেকেই ভালো হয়ে যান।

হেপাটাইটিস বি-এর সংক্রমণকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। কোনো ব্যক্তি যখন প্রথমবার আক্রান্ত হন, তখন সেটিকে অ্যাকিউট হেপাটাইটিস বি বলে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ওষুধের মাধ্যমে এটি সেরে যায়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে হেপাটাইটিস বি-এর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডিও তৈরি হয়, যা তাকে পুনঃসংক্রমণের হাত থেকেও রক্ষা করে। কিন্তু ভাইরাসটিই যখন দীর্ঘ সময় অর্থাৎ ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে রক্তে থাকে, তখনই তা পরিণত হয় ক্রোনিকে। আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাধারণত ৫-১০ শতাংশ ক্রোনিক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এইচিআইভি যেভাবে ছড়াতে পারে প্রায় সেভাবে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসও ছড়াতে পারে। ভাইরাস সংক্রমণের পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৩০ থেকে ১৮০ দিন সময় লাগতে পারে। হাত ধরা, কোলাকুলি করা কিংবা হাঁচি-কাশি মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় না। হেপাটাইটিস বি-এর কার্যকর ভ্যাকসিন রয়েছে। এর ডোজ ৪টি। প্রথম ৩টি একমাস পরপর এবং চতুর্থটি প্রথম ডোজ থেকে এক বছর পর দেওয়া হয়। পাঁচ বছর পর একটি বুস্টার ডোজ নিলে এর মাধ্যমে শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।

হেপাটাইটিস সিকে বলা হয় নীরব ঘাতক। শরীরে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে তা ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে যকৃতে স্থায়ী প্রদাহ তৈরি করে। একে বলে ক্রোনিক হেপাটাইটিস সি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে রোগের কোনো লক্ষণ থাকে না বললেই চলে। কিন্তু পরবর্তী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে রোগীদের প্রায় অর্ধেকই লিভার সিরোসিসের মতো মারাত্মক জটিলতায় আক্রান্ত হয়। অনেকেরই পরবর্তীকালে লিভার ক্যানসার দেখা দেয়, যার পরিণতি মৃত্যু। হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী অ্যালকোহল কিংবা মাদক সেবন করলে সিরোসিস কিংবা লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায়। অ্যান্টি এইচসিভি ও হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আরএনএ পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে কি-না, তা শনাক্ত করা যায়। দুঃখজনক হলো হেপাটাইটিস সি-এর কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা নেই। তবে নতুন আবিষ্কৃত সাশ্রয়ী মুখে সেবনের ওষুধের কল্যাণে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস নিরাময়ের সম্ভাবনা এখন ৯৫ শতাংশের বেশি।

হেপাটাইটিস ডি একটি ডিফেক্টিভ ভাইরাস। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণ ছাড়া এটি শরীরে বিস্তার লাভ করতে পারে না। এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ভ্যাকসিনও নেই। তবে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম ও প্রতিরোধের বিষয়াবলী মেনে চললে সহজেই হেপাটাইটিস ডি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

হেপাটাইটিস ই মূলত পানিবাহিত একটি ভাইরাস। প্রাপ্ত তথ্য মতে, পৃথিবীতে হেপাটাইটিস ই-এর প্রথম মহামারিটি হয়েছিল ৫০ এর দশকের মাঝামাঝি দিল্লিতে। এ সময় প্রায় ২৯ হাজার লোক হেপাটাইটিস ইতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর হেপাটাইটিস ই-এর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মহামারিটি দেখা দিয়েছিল চীনের জিনজিয়ানে ১৯৮৬ সালে। যা স্থায়ী হয়েছিল প্রায় ২০ মাস আর এতে আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার লোক। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই মহামারিগুলো দেখা দিয়েছিল কোনো একটি বন্যার পর পরই। যদিও হেপাটাইটিস বি অথবা সি ভাইরাসের মতো হেপাটাইটিস ই লিভারে সিরোসিস বা ক্যানসার রোগ তৈরি করে না এবং এ ভাইরাসে আক্রান্ত অনেকেই আপনা-আপনি সেরেও যান, তা সত্ত্বেও বিশেষত গর্ভবতী মা যদি আগে থেকে কোনো লিভার রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং গর্ভাবস্থায় যদি তিনি হেপাটাইটিস ই দ্বারা আক্রান্ত হন, তবে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। দুঃখজনক হলো হেপাটাইটিস ই-এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ওষুধ এখনো বাজারে নেই।

ভাইরাল হেপাটাইটিসের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি রোগ নির্ণয় করে এর কারণ, সৃষ্ট জটিলতা এবং রোগের বর্তমান অবস্থা জেনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ দেবেন। এ ছাড়া হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর সব ওষুধ এখন বাংলাদেশে পাওয়া যায়। তাই হতাশ না হয়ে অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটাই শ্রেয়। তাবিজ-কবচ, মালা, জরি-বুঁটি, ঝাড়-ফুঁক ইত্যাদি কোনো অপচিকিৎসাই হেপাটাইটিস থেকে আরোগ্য লাভে কাজে আসে না।

হেপাটাইটিস প্রতিহত করতে কিছু বিষয় মেনে চলা যেতে পারে, যেমন-
১. বিশুদ্ধ খাবার ও পানি গ্রহণ করা
২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা
৩. মদ্যপান ও অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার করা
৪. নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের ব্যবস্থা করা ও ডিসপজেবল সুঁচ ব্যবহার করা
৫. ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ যেমন- অনিরাপদ যৌনতা, একই সুঁচ বা সিরিঞ্জ বহুজনের ব্যবহার প্রভৃতি পরিহার করতে হবে
৬. যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করতে হবে
৭. সেলুনে শেভ করার ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা ব্লেড বা রেজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে
৮. চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে
৯. হেপাটাইটিস আক্রান্ত মায়ের সন্তান প্রসব যথাসম্ভব হাসপাতালে ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে করতে হবে।
১০. আকুপাংচার, ট্যাটু করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে।
১১. টিকা গ্রহণের মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ এবং বি ভাইরাস প্রতিরোধ করা যায়।

ক. যাদের দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস বি ও সি রোগ আছে, যারা সম্প্রতি হেপাটাইটিস এ রোগীর সংসর্গে এসেছেন, হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের প্রকোপ বেশি; এমন স্থানে কেউ ভ্রমণ করলে এবং গর্ভবতী মহিলা ও বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস এ-এর টিকা বেশ কার্যকর হতে পারে।

খ. হেপাটাইটিস বি দ্বারা আক্রান্ত মায়ের সন্তান প্রসবের ১২ ঘণ্টার মধ্যে নবজাতককে হেপাটাইটিস বি-এর টিকা দিতে হবে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, যাদের কোনো যৌনবাহিত রোগ আছে, যাদের দীর্ঘস্থায়ী যকৃতের সমস্যা আছে, যিনি হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে বসবাস করেন, সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারী, এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি, যৌনকর্মী প্রভৃতি উচ্চ ঝুঁকিবিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়মিত হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের আওতায় আনা উচিত।

সর্বোপরী যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে হেপাটাইটিসের মতো রোগকে অনেকাংশে প্রতিহত করা সম্ভব। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বিহীন একটি সুস্থ সমৃদ্ধ পৃথিবী আমরা অর্জন করতে পারি। এজন্য প্রত্যেককেই যার যার জায়গা থেকে সচেতনতার হাত প্রসারিত করতে হবে। তবেই সম্ভব ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি নিরাপদ পরিবেশ উপহার দেওয়া।

  • সর্বশেষ - ফিচার