, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

ডিএসসিসির আধুনিক গণশৌচাগার ভোগান্তি কমাল নগরবাসীর

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ : 

ডিএসসিসির আধুনিক গণশৌচাগার ভোগান্তি কমাল নগরবাসীর

মেগাসিটি ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। বসবাসরত ও বহিরাগত মিলিয়ে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ প্রতিদিন নগরীতে চলাচল করে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ শহরে জনসংখ্যা এবং আকাশচুম্বী ভবন যেমন বাড়ছে, তেমনি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে নাগরিক সমস্যার পরিধি। এক সময় চাহিদার তুলনায় রাজধানীতে পাবলিক টয়লেট বা গণশৌচাগারের সংখ্যা ছিল খুবই কম। গণশৌচাগার সংকটের কারণে ঘরের বাইরে গেলে নানা সমস্যা পোহাতে হতো নাগরিকদের, পড়তে হতো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ৪৩টি আধুনিক গণশৌচাগার বা পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করেছে। পাশাপাশি পথচারীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচটি প্রস্রাবখানাও।

ডিএসসিসির এসব গণশৌচাগারে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা চেম্বার রয়েছে। পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে জুতা খুলে ভেতরে রাখা স্যান্ডেল পরে ব্যবহার করতে হয় এসব শৌচাগার। সেই সঙ্গে আছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা, স্যানিটারি ন্যাপকিন, উন্নতমানের আয়না, সিসি ক্যামেরাও। প্রতিবন্ধীদের জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এমনকি শৌচাগারের রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছেন পেশাদার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নারী কেয়ারটেকারও।

জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বর তার করপোরেশনে আধুনিক সুবিধা সংবলিত গণশৌচাগারের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে এলাকায় ৪৫টি নতুন শৌচাগার নির্মাণ ও ১৭টি গণশৌচাগার সংস্কারের কাজে হাত দেয়া হয়। ইতোমধ্যে দক্ষিণ সিটি এলাকায় মোট ৩২টি নতুন শৌচাগার নির্মিত হয়েছে এবং ৯টি শৌচাগার সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া একটি নতুন শৌচাগার নির্মাণ ও একটির সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। তবে আরও বেশ কয়েকটি শৌচাগার নির্মাণের কথা থাকলেও স্থান সংকটের কারণে তা এখনো সম্ভব হয়নি।

Public-Toilet-1

এখন পর্যন্ত যে কাজ হয়েছে, তাতে করপোরেশনের ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ডিএসসিসির মেগা প্রকল্প থেকে এসব কাজ করা হচ্ছে।

ইজারাপ্রথা বাতিল করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও এনজিওকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে অত্যাধুনিক এসব গণশৌচাগার পরিচালিত হচ্ছে। আর এ কারণেই প্রতিটি শৌচাগারের রক্ষণাবেক্ষণ সুচারুরূপে হচ্ছে এবং মানসম্মত পরিবেশ থাকছে। ব্যবহারকারীদের দেয়া নির্ধারিত খাজনা থেকেই এর রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে।

যেসব স্থানে নির্মিত হয়েছে আধুনিক এসব শৌচাগার
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের চানখাঁরপুল, হাজারীবাগ পার্ক, বৌ-বাজার, হোসেনী দালান, আরমানিটোলা, বাবুবাজার ব্রিজ, বাদামতলী ঘাট, ইউনিসেফ স্কুল ২, কবি নজরুল সরকারি কলেজ সংলগ্ন, ফায়ার সার্ভিস, কাপ্তানবাজার, ৩৬ নম্বর মালকাটোলার পাশে, কোর্ট হাউজ ও বিআরটিসি, সায়েদাবাদ জনপথ রোড সংযোগস্থল, দয়াগঞ্জ, দোলাইপাড়, যাত্রাবাড়ী, শাহ সাহেব লেন, আঞ্চলিক অফিস মসজিদ সংলগ্ন, সায়েদাবাদ টার্মিনাল কুমিল্লা জোন, কাঁঠালবাগান, আইইবি, খিদমাহ হাসপাতাল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল, জোড় পুকুর, ১০ নম্বর কাউন্সিলর অফিস সংলগ্ন, ১১ নম্বর ওয়ার্ড পূজা মন্দির, মাতবরঘাট এবং কোম্পানিঘাটে নির্মিত হয়েছে আধুনিক গণশৌচাগার।

Public-Toilet-1

সংস্কার হয়েছে যেসব গণশৌচাগার
মতিঝিল এজিবি কলোনি এলাকা, গণকটুলী (কলোনি), নয়াবাজার (দুটি), বাবুবাজার, ডিএসসিসির আঞ্চলিক অফিস (দুটি), সায়েদাবাদ টার্মিনালের সিলেট জোনও পুরাতন জোনে সংস্কার হয়েছে গণশৌচাগার।

এছাড়া আজিমপুর এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের চট্টগ্রাম জোনে একটি নতুন শৌচাগারের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে ৩২টি নতুন শৌচাগার নির্মাণ ও ৯টি সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া একটি নতুন নির্মাণ ও আরেকটির সংস্কারকাজ চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মাদ সাঈদ খোকন বলেন, আমরা নগরবাসীকে একটি পরিকল্পিত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় আনার চেষ্টা করেছি। এগুলোতে নারীদের জন্য আলাদা চেম্বার রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে যে কয়টি টয়লেট নির্মাণ করে দিয়েছি, সেগুলোর পরিবেশ ফাইভ স্টার হোটেলের মতো বলা যায়। কাঠামোগত দিক থেকে দেখতেও সুন্দর এগুলো।

Public-Toilet

এদিকে এসব আধুনিক গণশৌচাগারের পাশাপাশি ফুটপাতের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে আধুনিক মডেলের আটটি প্রস্রাবখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি প্রস্রাবখানায় একসঙ্গে দুটি চেম্বার রয়েছে। এজন্য মাত্র ৭ দশমিক ৫ ফুট বাই ২ দশমিক ৫ ফুট জায়গা প্রয়োজন হয়েছে। প্রস্রাবখানায় থাকছে পর্যাপ্ত টিস্যু, এতে ৩৫০ লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ফাইবার গ্লাস ট্যাংক ও ফাইবার গ্লাস বা হাইব্রিড ইউরিনাল বেসিন রয়েছে। সেখানে কোনো দুর্গন্ধ থাকছে না। এছাড়া রয়েছে স্বয়ংক্রিয় সেন্সর বা পুশ বোতামের মাধ্যমে ইউরিনাল ফ্লাশ পদ্ধতি। বর্ষায় ট্যাংকের পানি ধারণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাতে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে সৌরশক্তির মাধ্যমে।

ইতোমধ্যে পাঁচটি প্রস্রাবখানা স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দেয়াল ঘেঁষে, টেলিযোগাযোগ ভবন সংলগ্ন এলিফ্যান্ট রোডের সবজি বাগানে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের দেয়াল ঘেঁষে (দুটি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পূর্ব দিকের দেয়াল ঘেঁষে।

Public-Toilet

বাকি তিনটিও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বসানো হবে। সমীক্ষাসহ এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে আট লাখ টাকা। তবে ভবিষ্যতে কোনো প্রস্রাবখানা নির্মাণ করা হলে সেগুলোর ব্যয় অর্ধেকে নেমে আসবে বলে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গুলিস্থান জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন গণশৌচাগারের সামনে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবি হায়দার হোসেনের সঙ্গে। তিনি  বলেন, মার্কেটিংয়ের কাজ করার সুবাদে ঢাকা শহরের বিভিন্ন দিকে ঘুরতে হয় আমাদের। পথিমধ্যে আগে পাবলিক টয়লেটের খুবই সংকট ছিল। যেগুলো ছিল, সেগুলোর ভেতরের পরিবেশও ছিল খুব খারাপ। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বর্তমানে অনেকগুলো নতুন পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে যেগুলোর পরিবেশ খুবই সুন্দর। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এগুলো রাস্তার পাশের পাবলিক টয়লেট। বড় বড় আধুনিক হোটেলর টয়লেটের মতো এগুলোর পরিবেশ।

Public-Toilet

তিনি বলেন, এসব পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে নারীদের জন্য আলাদা পার্ট রাখা হয়েছে। নারীদের জন্য ঢাকা শহরে আগে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করা খুবই কঠিন ছিল। বর্তমানে এসব পাবলিক টয়লেটে নারী, প্রতিবন্ধীদের জন্য ভিন্ন রকম পরিবেশ রাখা হয়েছে।

পাবলিক টয়লেটের পাশাপাশি আলাদাভাবে নির্মাণ করা প্রস্রাবখানার বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ হকার আমিনুল হক বলেন, রাস্তায় চলার সময় চাপ অনুভব করলে মানুষ ফুটপাতেই কাজ সারতো। কিন্তু এখন নতুন নতুন প্রস্রাবখানা নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায়। এগুলোর পরিবেশও অনেক সুন্দর। পর্যাপ্ত পানি, টিস্যুসহ অনেক সুবিধা আছে এগুলোতে। ফলে পথচারীদের খুবই উপকার হয়েছে।

  • সর্বশেষ - সাক্ষাতকার