, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

জাতীয় ক্রিকেটার সাইফুল-সানোয়ারের অন্যরকম আবেদন

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  প্রকাশ : 

জাতীয় ক্রিকেটার সাইফুল-সানোয়ারের অন্যরকম আবেদন

রাজধানী হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘ঢাকা’ই শেষ কথা নয়। বিশেষ করে মেধাবী, মানসম্পন্ন ও সফল ক্রিকেটার উৎপাদনে রাজধানী ঢাকা অনেক পিছনে। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম আছে সবার ওপরে। স্বাধীনতার পর দেশের ক্রিকেটের সর্বাধিক তারকার জন্ম, না নয় বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে।


মিনহাজুল আবেদিন নান্নু , আকরাম খান, নুরুল আবেদিন নোবেল, জাহিদ রাজ্জাক মাসুম, শহিদুর রহমান শহীদ, জিয়াউর রশিদ রুপম, নাফিস ইকবাল, আফতাব আহমেদ, তামিম ইকবালের ক্রিকেট হাতে খড়ি চট্টগ্রামে।


তারপর কোন জেলায় মেধাবি ও কোয়ালিটি ক্রিকেটারের জন্ম হয়েছে বেশি? তা খুঁটিয়ে দেখতে গেলে ক'টি জেলা শহরের নাম চলে আসবে। এর ভেতরে রাজশাহী, ময়মনসিংহ আর খুলনা বাকিদের চেয়ে এগিয়ে।


ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের ময়মনসিংহ শহর থেকেও এক ঝাঁক নামি ক্রিকেটার উঠে এসেছেন। সেই ঢাকাই ক্লাব ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান সদরুল আনাম, সব সময়ের অন্যতম সেরা বাঁহাতি স্পিনার রামচাঁদ গোয়ালা, উইকেটকিপার কাম হার্ডহিটার বেলায়েত হোসেন বেলাল, পেসার অলক চক্রবর্তী, অফস্পিনার আনোয়ারুল আমিন আজহার, মারকুটে ওপেনার হারুনুর রশিদ লিটন, মিডল অর্ডার মাহবুবুর রহমান সেলিম, ৯৭‘র আইসিসি ট্রফি বিজয়ের অন্যতম রূপকার পেসার সাইফুল ইসলাম, অলরাউন্ডার সানোয়ার হোসেন, পেসার জাকির হাসান ও স্পিনিং অলরাউন্ডার ফাহিম মুন্তাসির সুমিতের মত সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার।


ঢাকাই ক্লাব ক্রিকেটের এক সময়ের পরিচিত মুখ নৃপেন, আনোয়ার, প্রয়াত পিকা, অলরাউন্ডার ইকবাল হোসেন, বিপ্লব সরকার বিল্লু, ড্যাশিং ওপেনার রাশেদুল হক সুমন, সেলিম, দিলীপ পান্ডে, সাইদ, মোসাদ্দেক রুবেল এবং বর্তমান জাতীয় দলের অপরিহার্য সদস্য মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং আরেক জাতীয় ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আব্দুল মজিদ এবং উত্তম সরকার প্রমুখ ক্রিকেটারের জন্ম, বেড়ে ওঠা ও ক্রিকেটে হাতেখড়ি এই ময়মনসিংহে।


এক সময় ময়মনসিংহ ছিল বড় ভেন্যু। সত্তর দশকের মাঝামঝি থেকে আশির দশকের শুরু পর্যন্ত এমসিসি, ডেকান ব্লুজ , হায়দ্রাবাদ ব্লুজ আর শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের সাথে বিসিবি একাদশ ও বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের খেলা হয়েছে ময়মনসিংহে।


ভারতের মুম্বাইয়ের শিবাজী পার্ক আর কলকাতার গড়ের মাঠ যদি হয় ক্রিকেটার গড়ে ওঠার সূতিকাগার, তাহলে ময়মসসিংহ শহরের ক্রিকেটার তৈরির প্রাণকেন্দ্র হলো সার্কিট হাউজ মাঠ।


ওপরে যে সব ক্রিকেটারের কথা বলা হলো, তারা কম বেশি সবাই ঐ মাঠে খেলে খেলেই বড় হয়ে এক সময় ঢাকার ক্রিকেটে পা রেখে জাতীয় দলে ঢুকেছেন।


জানা গেছে সেই ব্রক্ষপুত্র নদ সংলগ্ন ময়মনসিংহ শহরের সেই ঐতিহ্যবাহী সার্কিট হাউজের সবুজ গালিচা ঘেরা খোলা মাঠের চারপাশে সীমানা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইট-পাথরের বাউন্ডারি নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে ময়মনসিংহের ক্রিকেটাররা খোলা এ মাঠে বাউন্ডারি নির্মাণের সিদ্ধান্তকে ‘হৃদয়হীন’ বলে অভিহিত করেছেন।


জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার সানোয়ার হোসেন, সাইফুল ইসলামরা এ উদ্যোগকে আবার পুণঃবিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন। জাগো নিউজের সাথে আলাপে সাইফুল ও সানোয়ার বলেন, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মাঠ। এ মাঠের অনেক ক্রিকেটারের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। মাঠটি খোলা আছে। সেই খোলা মাঠই মূল সৌন্দর্য্য। সেখানে প্রাচীর ঘেরাও করলেই মাঠের সেই চিরায়ত সৌন্দর্য্য হারাবে।


পেসার সাইফুলের শঙ্কা, দেয়াল নির্মাণ হলেই ধীরে ধীরে ক্রিকেট চর্চার পাশাপাশি মাঠে প্রদর্শনী বা অন্য কার্যক্রম অনুষ্ঠানের প্রশ্ন চলে আসবে। তাতে শুধু সৌন্দর্য্যই ব্যহত হবে না। মাঠটিতেও ধীরে ধীরে ক্রিকেট চর্চা কমবে।


জাতীয় দলের হয়ে ৯৭‘র আইসিসি ট্রফি এবং টেস্ট-ওয়ানডে খেলা সানোয়ার বলেন, ‘সার্কিট হাউজ মাঠ আকারে এত বড় যে অনায়াসে তিনটি ক্রিকেট ম্যাচ একসাথে চালানো সম্ভব। এবং এ মাঠের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যও অসাধারণ। চারদিকে প্রচুর গাছপালা এবং পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এতো সুন্দর এবং এতো বিশাল একটা মাঠ আমার মনে হয় না বাংলাদেশের আর কোথাও আছে। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় আমার খেলার সৌভাগ্য হয়েছে কিন্তু এমন ন্যাচারাল বিউটি এবং এত বড় মাঠ আমি দেখিনি।’


সানেয়ারের শেষ কথা, ‘সাম্প্রতিক সময়ে শুনতে পাচ্ছি ময়মনসিংহ শহরের এই মাঠকে অবরুদ্ধ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা ও বিভাগীয় কর্মকর্তারা সবাই মিলে যে পরিকল্পনা করেছেন, সেটাকে আমি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে চাই না। তারা হয়তো মাঠটির সেফটি বা সিকিউরিটির কথা চিন্তা করেই এ পরিকল্পনা করেছেন। সেফটি হিসেবে বলা হচ্ছে গরু-ছাগল বা গাড়ি অনায়াসে মাঠে ঢুকে যায়, যেটা মাঠের ক্ষতি করে এবং সিকিউরিটি নষ্ট হয়। সেটা অবশ্যই ইতিবাচক চিন্তা। তবে মাঠকে অবরুদ্ধ না করে বিকল্প চিন্তা করা যেতে পারে।’

  • সর্বশেষ - খেলাধুলা