, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

দুরন্ত আবাহনীর সামনে টালমাটাল মোহামেডান

  স্পোর্টস ডেস্ক

  প্রকাশ : 

দুরন্ত আবাহনীর সামনে টালমাটাল মোহামেডান

ফুটবল, হকির মত একসময় মোহামেডান-আবাহনীর ক্রিকেট লড়াইও অন্যরকম উত্তেজনা ছড়াতো। সাদা-কালো আর আকাশী-হলুদ ক্রিকেট লড়াই মানেই ছিল সর্বোচ্চ আকর্ষণ। জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বীতা। সেটা শুধু দুই দলের জনপ্রিয়তা আর সমর্থন বেশি ছিল বলে নয়।

আসলে তখন ঢাকাই ক্রীড়াঙ্গনই ছিল আবাহনী আর মোহামেডানের সাফল্যে ভরা। ফুটবল, হকির মত ক্রিকেট লিগ আর যে কোন আসর মানেই ছিল সাদা-কালো আর আকাশী-হলুদদের সাফল্যে ভরা।

৭০ দশকের শেষ ভাগ থেকে বর্তমান শতাব্দীর প্রথম অংশ পর্যন্ত ঢাকাই ক্রিকেটের প্রধাণ শক্তিই ছিল ওই দুই দল। শিরোপাটা মূলতঃ দুই জনপ্রিয় আর জায়ান্ট আবাহনী-মোহামেডানের মধ্যেই কেন্দ্রীভূত ছিল।

এক বছর আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হলে পরের বছরই হয়ত মোহামেডানের ঘরে উঠতো লিগ শিরোাপা। দামাল স্মৃতি, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শহীদ দিবসসহ নানা টুর্নামেন্টের প্রায় ৭৫ ভাগের বেশি ফাইনাল খেলেছে মোহামেডান কিংবা আবাহনী।

তাই মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ শুধু দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মর্যাদার লড়াই’ই ছিল না; শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচও ছিল। আরও একটি বিশেষ কারণে মোহামেডান আর আবাহনী ম্যাচ দেখতে দর্শকরা ছুটে যেতেন মাঠে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম দর্শকে ভরে যেত। তাহলো, দেশের প্রায় শীর্ষ ও প্রতিষ্ঠিত তারকারাই তখন মোহামেডান আর আবাহনীতে খেলতেন।

কিন্তু সময়ের ফেরে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটেরই সেই সোনালী দিন আর নেই। এখন আর ক্লাব ক্রিকেট আগের মত দর্শক টানে না। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের আবেদন, আকর্ষণও গেছে কমে। সে অর্থে এখন আর আকাশী-হলুদ ও সাদা কালোর লড়াই নিয়ে কারো বাড়তি উৎসাহ নেই।

সে উৎসাহে ভাটা আসার একটা বড় কারণ হলো মোহামেডানের শক্তি কমে যাওয়া। আবাহনী এখনো আগের মতই তারকা সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দল এবং প্রায় প্রতিবছরই শিরোপার দাবিদার। লিগের সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নও আকাশী-হলুদ জার্সিধারীরা।

কিন্তু সে তুলনায় মোহামেডান গেছে অনেক পিছিয়ে। আবাহনী যেখানে এক নম্বর পজিশনের জন্য দল গড়ে এবং বেশিরভাগ সময় এক কিংবা দুইয়ে থাকে, সেখানে মোহামেডান প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কোন ট্রফি নেই। ২০০৮-২০০৯ মৌসুমে খালেদ মাসুদ পাইলটের নেতৃত্বে সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিল মোহামেডান।

এবার যিনি মোহামেডান ক্যাপ্টেন, সেই সাকিব আল হাসান ওই বছর ছিলেন আবাহনীর ক্যাপ্টেন। ১১ বছরে ১০ লিগে মোহামেডান শিরোপা পায়নি। ২০১০-১১ মৌসুমে সাকিব-তামিমের মোহামেডান রানার্সআপ হয়েছিল। আর ২০১৩-১৪’তে সাদা কালোদের লিগ টেবিলে অবস্থান ছিল চার।

jagonews24

যেহেতু লিগে সাফল্য নেই। তাই আবাহনীর সাথে পেরে ওঠার কথাও না। ইতিহাস পরিসংখ্যান জানাচ্ছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর বিপক্ষে মোহামেডান শেষ জিতেছিল ২০১৬ সালে। সে বছর ১২ মে শেরে বাংলায় প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে ৮ উইকেটে জিতেছিল মোহামেডান।

তারও দুই মৌসুম আগে ২০১৩-২০১৪ মৌসুমেও প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীকে মোহামেডান ৩ উইকেটে হারিয়েছে। শামসুর রহমান শুভ সেঞ্চুরি করেছিলেন।

আর গত ছয় বছরে আবাহনীকে হারাতে পারেনি মতিঝিলের ক্লাবটি। এবার কী পারবে মোহামেডান? এক সময়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারানোর সামর্থ্য কী আছে তাদের? সে প্রশ্ন রেখেই আগামীকাল মাঠে গড়াবে আকাশী-হলুদ আর সাদা কালোদের লড়াই। শেরে বাংলায় দুপুর দেড়টায় শুরু হবে এ দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বৈরথ।

শুরুটা দেখে মনে হয়েছিল এবার অনেক দিন পর আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচেই হতে পারে প্রথম পর্বের শীর্ষস্থান নির্ধারনী লড়াই। কারণ নেট রানরেটে মুশফিকুর রহীমের আবাহনী এগিয়ে থাকলেও পয়েন্টে সাকিব আল হাসানের মোহামেডানও ছিল সমান সমান।

শাইনপুকুরের বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করা সাদা কালোরা টানা তিন ম্যাচ জিতে আশা জাগিয়েছিল ভাল কিছু করার; কিন্তু শেখ জামালের কাছে চতুর্থ ম্যাচে বোলিং ব্যর্থতায় হারের পর এলোমেলো হয়ে গেছে মোহামেডান। টানা তিন জয়ের পর সমান তিন হারে এখন কেমন যেমন আড়ষ্ট। জবুথবু, রীতিমত টালমাটাল সাকিবের দল।

jagonews24

অন্যদিকে আবাহনী ধীরে ধীরে নিজেদের ফিরে পেয়েছে। মোহামেডানের মত আবাহনীও চতুর্থ খেলায় খেলাঘর সমাজ কল্যাণের কাছে হেরে বসে। কিন্তু ঠিক পরের ম্যাচে গাজী গ্রুপকে ৭ উইকেটে হারিয়ে আবার জয়ের পথ খুঁজে পেয়েছে মুশফিকের দল। আর আজ মোহামেডান যখন টেবিলের নিচের দিকের দল লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জের কাছে চরমভাবে পর্যদুস্ত, সেই দিন আবাহনী রান বন্যায় ভাসিয়েছে শাইনপুকুরকে।

আগের ৫ ম্যাচে আবাহনীর ত্রানকর্তা মনে হয়েছে শুধুই অধিনায়ক মুশফিককে; কিন্তু ৫ম ম্যাচে গাজী গ্রুপের বিপক্ষে ক্যাপ্টেন মুশফিকের সাথে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন মোসাদ্দেকও। আর আজ (৬ষ্ঠ ম্যাচে) মুশফিক ব্যাটিংয়েই নামেননি। রান পেয়েছেন ওপেনার নাইম শেখ (৫০ বলে ৭০) আর আফিফ হোসেন ধ্রুব (৪২ বলে ৫৪)।

ব্যক্তি নির্ভরতা কাটিয়ে আবাহনী এখন অনেক সাজানো গোছানো দল। টিম পারফরমেন্সই দলের মূল শক্তি। অন্যদিকে মোহামেডান একদমই ভাঙ্গাচোরা, বিধ্বস্ত। আজ ছয় নম্বর খেলায় দলে থেকে ব্যাটিংয়ে না নেমেও আবাহনীর সাফল্যের রূপকার মুশফিক। অন্যদিকে মোহামেডান খেলছে ব্যাট হাতে ব্যর্থতার ঘানি টানা এবং নিজেকে খুঁজে ফেরা সাকিবের নেতৃত্বে।

৫ ম্যাচে টপ অর্ডারে রান না পাওয়া আবাহনী আজ বৃহস্পতিবার ছয় নম্বর ম্যাচে ওপেনিং জুটিতেই তুলেছে ১১১ (১২.১ ওভারে) রান। আর অন্যদিকে মোহামেডান লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জের বিপক্ষে ৭ ওভারে ২৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে কোনমতে ১১৩ করে হেরেছে ৯ উইকেটে।

এই যে দু’দলের পারফরমেন্সের বিপরীত অবস্থা, সেটাই যদি শুক্রবার আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথে প্রভাব ফেলে, দু’দলের পারফরমেন্সে প্রতিফলিত হয়, তাহলে মোহামেডানের জেতা বহুদর, লড়াই করাও হবে কঠিন। আর পুরো লিগে নিজেকে মেলে ধরতে না পারা অধিনায়ক সাকিব যদি ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে ওঠেন- তাহলেই কেবল মোহামেডানের সম্ভাবনা থাকবে।

  • সর্বশেষ - খেলাধুলা