, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধে জয় কঠিন

  অনলাইন ডেস্ক

  প্রকাশ : 

অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধে জয় কঠিন
করোনার বিরুদ্ধে লড়তে প্রয়োজন অনেক সাজসরঞ্জাম।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের যারা সেবা দেবেন, সেই চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা রয়েছেন সম্পূর্ণ অরক্ষিত। ডাক্তার-নার্সদের সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে তারা চিন্তিত। মাস্ক, গাউনসহ পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম (পিপিই) নেই। হাসপাতালগুলোতে পরীক্ষানিরীক্ষার কিট সংকটও রয়েছে। জেলা পর্যায়ে আইসোলেশন ওয়ার্ড থাকলেও পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বক্তব্যের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের চিত্র ভিন্ন।

এমন অবস্থার মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অনেকটা আক্ষেপ করে বলেন, অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধে নামলে ফলাফল আসে শূন্য। অস্ত্র ছাড়া খালি হাতে যেমন যুদ্ধে বিজয়ী হওয়া যায় না, তেমনই অবস্থার মধ্যে আছেন চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা। তাই দ্রুত চিকিৎসক-নার্সদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। না হলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। অবিলম্বে দেশের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর মেশিন দেওয়ার দাবি জানান বিশেষজ্ঞরা।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত চিকিত্সক ও নার্সসহ সংশ্লিষ্ট কেউ যেন সংক্রমিত না হন সেজন্য তাদের প্রত্যেকের জন্য পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ব্যবহার অত্যাবশ্যক। তবে বর্তমানে যে পরিমাণ পিপিই মজুত রয়েছে তা খুবই সীমিত। করোনা ভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়াতে পারে—এমন আশঙ্কাকে মাথায় রেখে দেশীয় একটি কোম্পানির মাধ্যমেই উন্নতমানের পিপিই উত্পাদনের চিন্তাভাবনা করা হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছেও পিপিইর চাহিদা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে করোনা ভাইরাস ব্যাপক হারে সংক্রমিত না হলে মজুত থাকা পিপিই দিয়েই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে। তবে ব্যাপক হারে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হলে মজুতকৃত পিপিই দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। কারণ সার্বক্ষণিক ফেসমাস্ক, চশমা আর সুরক্ষিত পোশাকসহ নানা কিছু দিয়ে শরীর মুড়িয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে হয়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ডাক্তার-নার্সদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে চীনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, সব হাসপাতালে আমরা মাস্ক দিচ্ছি। কিন্তু অনেকে ব্যবহার করতে চায় না। তিনি বলেন, বহিঃবিভাগে মাস্ক ও ইনডোরে গাউন ব্যবহার করতে হবে।

করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম থেকেই বিশ্ববাসীকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেন। কিন্তু বাংলাদেশে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির কথা বললেও মাঠ পর্যায়ের চিত্র ভিন্ন। যা মাঠ পর্যায়ের চিকিত্সক-নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মী স্বীকার করেছেন। করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের অব্যবস্থাপনা দেখার কেউ নেই। এ কারণে ইতিমধ্যে রাজধানীর একটি হাসপাতালে কানাডাফেরত ছাত্রী নাজমা আক্তার বিনা চিকিত্সায় মারা গেছেন। প্রথমে ঐ ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওয়ার্ডেও নেওয়া হয়। কিন্তু যখন ডাক্তার-নার্সরা জানতে পারেন ঐ রোগী কানাডাফেরত। তখনই তাকে সেবা দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। আগে করোনা পরীক্ষা করতে আইইডিসিআরকে বলা হয়। নমুনাও পাঠানো হয়। আইইডিসিআর থেকে রিপোর্ট আসার আগেই ঐ ছাত্রী মারা যান। পরে রিপোর্টে দেখা যায়, ঐ ছাত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, চিকিত্সকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টিকে আগে নিশ্চিত করা উচিত ছিল। চিকিত্সাসেবা কর্মীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় অব্যবস্থাপনাই নাজমা আক্তারের মৃত্যুর জন্য দায়ী। ডাক্তাররা বলেন, সব মেডিক্যাল কলেজে অভিজ্ঞ জনবল রয়েছে। সেখানে পিসিআর মেশিনসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হলে রোগীরা দ্রুত সেবা পাবে। ঢাকার বাইরে করোনা রোগী পাওয়া গেলে আইসোলেশনে রেখে সঠিকভাবে চিকিত্সা ও ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে। এদিকে, করোনা মোকাবিলায় যে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে চিকিত্সা-সংশ্লিষ্টরা চিকিত্সাসেবা সংক্রান্ত প্রয়োজনমাফিক সরঞ্জাম ক্রয় করতে পারছে না বিভিন্ন বিধিবিধানের কারণে।

ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধি সম্প্রতি থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রান্ড হাসপাতাল, ব্যাংকক জেনারেল হাসপাতাল, রুতদিন হাসপাতালসহ পাঁচটি হাসপাতাল সরেজমিন পরিদর্শন করে করোনা মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতি দেখেছে। ব্যাংককের প্রতিটি হাসপাতাল সুরক্ষিত। সেসব হাসপাতালে কোনো ভিজিটর গেলেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল জানান, চিকিত্সক-নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে করোনা মোকাবিলা করা অসম্ভব। চিকিত্সকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা হলে ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আর এর দায়-দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান জানান, দোহাই লাগে চিকিত্সাসেবা কর্মীদের আগে নিরাপত্তা দিন। মনে রাখবেন, অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের নামিয়ে দেওয়া হলে সব সৈনিক মারা যাবে—এটাই স্বাভাবিক। তাই সবার আগে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

বিমানবন্দরে অব্যবস্থাপনা

বিশ্ব জুড়ে করোনা আতঙ্কের প্রবাসীদের দেশে আসার ঢল নেমেছে। কিন্তু বিমানবন্দরে রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। শনিবার ইতালিফেরত দেড়শ জনের সঙ্গে ৫০০ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় স্বাস্থ্য কর্মীদের ডেস্কর সামনে। কয়েক জন করে ডানে-বামে দেয়। শুধু এই পরীক্ষা করতে প্রত্যেক যাত্রীর দুই থেকে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। সেখানে ছিল নারী-পুরুষ ও শিশু। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অনেকে অসুস্থ হয়ে বসে পড়েন। স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশেরও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ছিল না।

  • সর্বশেষ - আলোচিত খবর