, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

প্রতিযোগীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে স্কয়ার

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ : 

প্রতিযোগীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে স্কয়ার

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সব সূচকে এগিয়ে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। আয়, মুনাফা, সম্পদ—সবকিছুতেই প্রতিযোগীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানটি। দায়ের পরিমাণও প্রধান প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশ কম। মুনাফার প্রবৃদ্ধিতেও রয়েছে বেশ ধারাবাহিকতা।


পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান প্রতিযোগী রেটেনা ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। তবে এই দুই কোম্পানি সম্মিলিতভাবে বছরে যে মুনাফা করে তার প্রায় দ্বিগুণ মুনাফা হয় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের। এমনকি প্রধান চার প্রতিযোগীর সম্মিলিত মুনাফার চেয়েও স্কয়ারের মুনাফা বেশি।


তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের আয় হয় ৩৮৬৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। অপরদিকে রেনেটা ২২২২ কোটি ৮ লাখ ৮৭ হাজার এবং বেক্সিমকো ২১১৫ কোটি ৬৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা আয় করে। প্রতিযোগিতায় থাকা অপর দুই কোম্পানির মধ্যে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন (নতুন নাম ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার) ৪৪৭ কোটি ৪৮ লাখ ৯৮ হাজার এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস ৪৬৪ কোটি ৬৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আয় করে।


এদিকে কর-পরবর্তী স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস নিট মুনাফা করে ১০৫৬ কোটি ২৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। বিপরীতে রেনেটা ৩৮২ কোটি ৩৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা এবং বেক্সিমকো ৩০২ কোটি ৩৫ লাখ ১ হাজার টাকা নিট মুনাফা করে। অপর দুই কোম্পানির মধ্যে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ৯৮ কোটি ৫৭ লাখ ৩৫ হাজার এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস ১১ কোটি ৭৭ লাখ ১ হাজার টাকা নিট মুনাফা করে। অর্থাৎ প্রধান চার প্রতিযোগী সম্মিলিত যে মুনাফা করেছে, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এককভাবেই তার থেকে ২৬১ কোটি ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা মুনাফা বেশি করেছে।


মুনাফার পাশাপাশি সম্পদের দিক থেকেই অনেক এগিয়ে রয়েছে স্কয়ার। তাদের ৬৫০৬ কোটি ১৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা সম্পদের বিপরীতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বেক্সিমকো ফার্মার সম্পদের পরিমাণ ৪৭৭৯ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। আর রেনেটার সম্পদের পরিমাণ ২৪২০ কোটি ১২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এছাড়া গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের ৪৫০ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং বিকন ফার্মার সম্পদের পরিমাণ ৪৮৭ কোটি ১০ লাখ ৩ হাজার টাকা।


বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকলেও স্কয়ারের দায়ের পরিমাণ তুলনামুলক কম। প্রতিষ্ঠানটির মোট দায়ের পরিমাণ ৪২৫ কোটি ৫৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা। অপরদিকে রেনেটার দায় ৫৯১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৩ হাজার এবং বেক্সিমকোর ১৮১৯ কোটি ২০ লাখ ৫২ হাজার টাকা। অবশ্য গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ও বিকন ফার্মার দায় স্কয়ারের চেয়ে কম। এর মধ্যে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের দায় ২৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৫ হাজার এবং বিকন ফার্মার দায় ১৮৯ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।


প্রধান প্রতিযোগীদের চেয়ে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বিভিন্ন সূচকে যেমন এগিয়ে রয়েছে, তেমনি কোম্পানিটির আয় ও মুনাফার প্রবৃদ্ধিতে বেশ ধারাবাহিকতা রয়েছে। ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটি মোট আয় করেছে ৫২৯২ কোটি ৬২ লাখ ১৯ হাজার টাকা, যা ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ছিল ৪৪৫৯ কোটি ৫৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। তার আগে ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে ৩৪৫৭ কোটি ৩৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা আয় করে কোম্পানিটি।


অবশ্য ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় আগের বছরের তুলনায় কমে যায়। ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির মোট আয় ছিল ৩৬১৯ কোটি ১৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। যা ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে কমে ৩৩৬১ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার টাকায় নেমে আসে। আর ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে তা আরও কমে ৩৩২৯ কোটি ৯৬ লাখ ৭২ হাজার টাকায় দাঁড়ায়।


মোট আয় কমলেও ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বাড়ে। ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে যেখানে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা ছিল ৬৫২ কোটি ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা, তা ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে বেড়ে হয় ৭৫১ কোটি ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে তা আরও বেড়ে ৭৭৯ কোটি ২৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় দাঁড়ায়।


মুনাফা বাড়ার এই হার পরবর্তী বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকে। ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে স্কয়ার কর-পরবর্তী নিট মুনাফা করে ৮২১ কোটি ৯৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে তা বেড়ে হয় ১০৫৬ কোটি ২৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। আর ২০১৯-২০ হিসাব বছরে তা আরও বেড়ে ১২৯৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা হয়েছে।


যোগাযোগ করা হলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও বাংলাদেশের প্রথম প্রাইভেট অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি এইমস অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইয়াওয়ার সায়ীদ জাগো নিউজকে বলেন, নিঃসন্দেহে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস একটি ভালো কোম্পানি। তাদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কোম্পানিটির মুনাফা ও ব্যবসার প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো। তবে মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে কোম্পানিটি কী করেছে, সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। সুতরাং তথ্য-উপাত্ত না পাওয়া পর্যন্ত বর্তমান পরিস্থিতিতে কোম্পানিটি সম্পর্কে তেমন কিছু বলা সম্ভব না।


রফতানি বেড়েছে ১১ শতাংশ

বিদেশি ওষুধ রফতানি করে ২০১৯-২০ হিসাব বছরে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের আয় আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেড়েছে। ৪৩টির বেশি দেশে ওষুধ রফতানি করে ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটি আয় করেছে ১৬৫ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ছিল ১৪৯ কোটি ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির রফতানি আয় বেড়েছে ১৬ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার টাকা বা ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ।


স্কয়ারের পণ্য

২০১৯-২০ হিসাব বছরে ৩৫টি নতুন পণ্য আনার মাধ্যমে কোম্পানিটির পণ্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫৮টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৯১টি রয়েছে ট্যাবলেট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লিকুইড আছে ৮২টি। ৭৪টি আছে ট্যাবলেট, পাউডার, লিকুইড, ইনজেকশন, গ্রানুলার-এগ্রোভেট লোকাল। ক্যাপসুল আছে ৬১টি। ইনজেক্টেবল (ভায়াল ও আম্পুল) আছে ৫৭টি, ইনফিউশন ১৭টি এবং এনটি অপথাল প্রিপারেশন আছে ৩১টি।


এছাড়া ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট, স্প্রে, জেল ও অন্যান্য ৬৩টি, সাসপেনশন পাউডার ২১টি, ট্রপিকাল পাউডার ১টি, সাপোজিটরি ৬টি, ইনহেলার ও নেবুলাইজার ৮টি, ইনসুলিন ৮টি, বেসিক কেমিক্যাল ও পিলেট ২২টি আছে। পাশাপাশি ট্যাবলেট, পাউডার, লিকুইড, ইনজেক্টেবলস, গ্রানুলার-এগ্রোভেট আমদানি করা পণ্য আছে ৫৬টি। পাউডার লিকুইড, গ্রানুলার-শস্য যত্ন পণ্য আছে ২৬টি। আর ট্যাবলেট, পাউডার, লিকুইড, ইনজেক্টেবলস, গ্রানুলার-হারবাল অ্যান্ড নিউট্রাসিউটিক্যাল পণ্য আছে ২৬টি।


স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সাফল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (অপারেশন) মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। আমাদের যা বলার সবকিছু বার্ষিক প্রতিবেদনে আছে।

  • সর্বশেষ - অর্থ-বাণিজ্য