, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

সরিষাবাড়ী পৌর মেয়র রোকনের বিরুদ্ধে সব কাউন্সিলরদের অনাস্থা

সরিষাবাড়ী পৌর মেয়র রোকনের বিরুদ্ধে সব কাউন্সিলরদের অনাস্থা

সংবাদ সম্মেলনে পৌর মেয়র রোকনের বিরুদ্ধে সব কাউন্সিলরদের অনাস্থা ঘোষণা। ছবি: সংগৃহীত

জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকনকে অনাস্থা দিয়েছেন ১২জন কাউন্সিলর। শুক্রবার দুপুরে সরিষাবাড়ী স্পোর্টস এসোসিয়েশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।এতে পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।


এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আসার পথে ২নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোহেল রানাকে মেয়রের ক্যাডার বাহিনী মারধর করে বলে অভিযোগ করেছে করেছেন সোহেল রানা। অপর দিকে মেয়রের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অনৈতিক কাজের জন্য দায়ী করে পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন সরিষাবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা।


সংবাদ সম্মেলনে ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শ্রী কালা চাঁন পাল মেয়রের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর লিখিত অনাস্থা প্রস্তাবটি পাঠিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র-১ মোহাম্মদ আলী, প্যানেল মেয়র-২ জহুরুল ইসলাম, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোহেল রানা, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চায়না বেগম প্রমুখ।


এ মেয়রের বিরুদ্ধে ত্রাণ, এডিপি, বাস টার্মিনাল বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ, নারী কেলেঙ্কারী, কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রের মহড়া, কাউন্সিলর-স্টাফদের মাসিক বেতন-ভাতা না দেয়া, কাউন্সিলর ও সাধারণ নাগরিকদের হয়রানীসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়।


অনাস্থা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকন মতার অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে আসছেন। চলমান করোনা ভাইরাসের ত্রাণ বরাদ্দ নিজের খেয়াল-খুশিমতো নামে মাত্র বিতরণ দেখিয়ে অধিকাংশ অর্থ আত্মসাৎ করছেন। ডেঙ্গু নিধন বরাদ্দের আট লাখ টাকা ও পৌর কবরস্থান উন্নয়নের সাড়ে চার লাখ টাকা পুরোটা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এছাড়া ২০১৭-১৮ ও ১৯-২০ অর্থবছরের রাজস্ব খাতে অর্জিত টাকা নামে-বেনামে খরচ করেন। উন্নয়ন ও পরিচ্ছন্নতার চেয়ে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে বিভিন্ন স্থানে অনুমোদনহীন পার্ক নির্মাণ দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা নষ্ট করেন মেয়র । বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ ৫০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে মেয়র নিজের ইচ্ছায় খরচ করেছেন। উন্নয়ন কর্মকান্ড অধিকাংশ দরপত্র ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে এবং নামে মাত্র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে নিজেই বাস্তবায়ন করেন।


এছাড়া আরও অভিযোগ করা হয়, মেয়র নিজের মাসিক সম্মানী নিয়মিত ভোগ করলেও পৌরসভার স্টাফ ও কাউন্সিলদের বেতন-ভাতা ১৩-১৬ মাস ধরে বকেয়া রেখেছেন। মন্ত্রণালয়ে তথ্য গোপন করে নিজের ভাবিসহ জামাতপন্থী লোকদের নিয়োগ দিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫-২০ লাখ টাকা করে উৎকোচ নিয়েছেন। ৮-১০ জন মাদকাসক্ত যুবককে মাস্টাররোলে নিয়োগ দেখিয়ে মেয়রের ব্যক্তিগত ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করছেন। কাউন্সিলর শ্রী কালা চাঁন পাল জানান, পৌরসভার কোনো কাজেই কাউন্সিলরদের মতামত নেয়া হয় না। মেয়র কার্যবিবরণী খাতায় কাউন্সিলরদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অগ্রীম স্বাক্ষর নেন। নিজের ইচ্ছা মাফিক পৌর কর ৪-৫ গুন বৃদ্ধি করায় নাগরিকদের নাজেহাল করা হলেও কাংক্ষিত সেবা মিলছে না।


কাউন্সিলর সোহেল রানা অভিযোগ করেন, অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করায় ইতিপূর্বে তাকে পিস্তল উঁচিয়ে মেয়র হত্যা হুমকি দিয়েছিলেন। প্রতিবেশিকে দিয়ে পারিবারিক ভাবে তাকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে আসার পথে মেয়রের পালিত ক্যাডাররা তার ওপর হামলা করে মারধরে করে। হাসপাতালে গিয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ করে তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন।


প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলী বলেন, মেয়রের লাইসেন্সকৃত পিস্তল বারবার অবৈধভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে কাউন্সিলর, সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকদের ডজন খানেক জিডি রয়েছে সরিষাবাড়ি থানায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুদক, স্থানীয় সরকার বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তাই কাউন্সিলররা দ্রুত মেয়রের অপসারণ দাবি করেন।


এ ব্যাপারে মেয়র রুকুনুজ্জমান রোকনকে বারবার ফোনে চেষ্টা করে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

  • সর্বশেষ - মহানগর