, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

নাটক থেকে পরিবার ‘উধাও’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ : 

নাটক থেকে পরিবার ‘উধাও’
বর্তমান সময়ের কয়েকটি নাটক।
নাটকের অর্ধেক বাজেট নিয়ে যাচ্ছেন দু’জন অভিনয়শিল্পী ** বাজেট স্বল্পতার কারণে নাটকে নেই পরিবারের উপস্থিতি** চ্যানেলগুলোতে চলছে এজেন্সির নির্ধারিত নাটক ** নাটক প্রচারের আগে নেই কোনো প্রিভিউ কমিটি

গান ও সিনেমার সংখ্যাটা প্রতিবছর কমলেও নাটকের সংখ্যা যেন প্রতিযোগিতার হারে বাড়ছে। ইউটিউব ও অন্যান্য প্লাটফর্ম বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে নাটক নির্মাণের সংখ্যা। টেলিভিশনের পর ইউটিউব এখন নাটকের বড় প্লাটফর্ম। তবে নাটকের সংখ্যা বাড়লেও মান নিয়ে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি বর্তমান নাটকের অবস্থা।

নাটকগুলোতে ঘুরেফিরে একই মুখ, মানহীন গল্প, ডায়লগে অশ্লীলতা এই বিষয়গুলো বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে আলোচনায়। এছাড়াও বর্তমান নাটকে পরিবার প্রায় উধাও হওয়ার উপক্রম। মূলত দু’জন চরিত্র নিয়ে এখনকার নাটকগুলো নির্মাণ হচ্ছে। যার বেশিরভাগ গল্প থেকে গতানুগতিক প্রেমের গল্প ও কখনো ভিন্ন কোনো গল্প। মূল চরিত্রের বাইরে অল্প কয়েকজন চরিত্র উঠে আসছে এখনকার নাটকে।

কিন্তু দেশের টিভি নাটকের সময়টা নব্বই দশক থেকে দেখা হলে পরিবার কেন্দ্র করেই গড়ে উঠতো নাটকগুলো। থাকতো একই নাটকে একাধিক তারকার সমাহার। বিটিভির সময়ের পর দেশের বেসরকারি চ্যানেলগুলোও সেই চর্চার মধ্য দিয়েই শুরু করে নাটক প্রচার। কিন্তু বর্তমানে নাটকের মূল সমস্যা বাজেট। এছাড়াও একটি নাটকের অর্ধেক বা অর্ধেকের বেশি বাজেট চলে যায় মূল দুটি চরিত্রে। যারা নাটকের নায়ক-নায়িকা। বাকি বাজেট দিয়ে একটি নাটক শেষ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিচালকদের।

অভিনেতা ও অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের নাটকের অবস্থা এখন যে পর্যায়ে এসে পড়েছে সেখানে মানসম্মত একটি নাটকের অভাব খুব। নাটক থেকে পরিবার উঠে যাওয়ার মূল কারণ বাজেট। কারণ নব্বই দশকে একটি নাটক নির্মাণ করতে যে বাজেট পাওয়া যেত এখন তার অর্ধেকও পাওয়া যায় না। এত স্বল্প বাজেটে একটি নাটক নির্মাণ কঠিন। অন্যদিকে এখন নাটকের দুজন চরিত্রই বাজেটের বেশিরভাগ অর্থ নিয়ে যাচ্ছেন। এই বিষয়গুলোর প্রভাবই পড়েছে এখনকার নাটকে।’

এ প্রসঙ্গে নাট্য নির্মাতা সাগর জাহান বলেন, ‘আমাদের মূল সমস্যা বাজেট। এটি নতুন কোনো সমস্যা নয়, অনেকদিন ধরেই এই সমস্যার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে আমাদের নাটক। একজন পরিচালকে যদি একটি নাটকের জন্য মাত্র ২ লাখ টাকা দেওয়া হয় তাহলে আর্টিস্ট পেমেন্ট দিয়ে যে টাকা থাকে তা দিয়ে বড় পরিসরে কোনো নাটক সম্ভব নয়। চ্যানেলগুলোও এখন নাটক কিনছে না। হয়তো এজেন্সির মাধ্যমে নাটক প্রচার হচ্ছে। অথবা চ্যানেলগুলো নাটকের ইউটিউব কপিরাইট দিয়ে দিচ্ছে। একটি নাটক যে সিস্টেমের মধ্য দিয়ে প্রচার হয় সেটিও একটি পরিবার। আমাদের সেই পরিবারের অবক্ষয় ঘটেছে। সুন্দর একটি লোকেশন দিয়ে বড় পরিসরে একটি নাটক যখন নাট্যকার লিখবেন সেই নাটকের প্রযোজক পাওয়া যাবে না। কারণ বড় পরিসরে একটি নাটক নির্মাণের জন্য যে লগ্নি করতে হবে তা উঠে আসবে না। অনেক সিনিয়র নির্মাতা এখন নাটক নির্মাণ বন্ধ করে দিচ্ছেন। কারণ বাজেট। এই একটি সমস্যার সমাধান হলে আমাদের সবগুলো জায়গা ঠিক হয়ে যাবে।’

তরুণ নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ এখনকার নাটকে পরিবারের অবস্থা নিয়ে বলেন, ‘নাটকের পরিবার গুরুত্বপূর্ণ। যেটি আমরা এখন হারাতে বসেছি। তবুও আমরা তরুণদের অনেকেই চেষ্টা করছি নাটকে পরিবার রাখার। আমি নিজেই পরিবারকে প্রাধান্য দিয়ে বেশ কয়েকটি নাটক নির্মাণ করেছি। গতবছর আমার ‘আশ্রয়’ নাটকটি পুরোপুরি পরিবার নির্ভর ছিল। কিন্তু আগে নাটকে পরিবারের উপস্থিতিটা যেমন ছিল এখন তেমনটা নেই। যার কারণ আসলে বাজেট। সবকিছুর খরচ যেভাবে বেড়েছে সেখানে বাজেট যেন পেছাচ্ছে।’

নাটকের সংখ্যা বাড়লেও পরিবারহীন নাটক ও নাটকের মান নিয়ে সমস্যার সমাধান কোনো উদ্যোগ নেই। প্রচারের আগে সেই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের কোনো সিস্টেমেও এখন নেই। যেখানে আগে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রতিটি নাটক প্রচারের আগে বসতো প্রিভিউ কমিটি। একটি নাটক প্রচারের আগে তার মান নির্ণয়ের চর্চা থেকে দেশের চ্যানেলগুলো সরে এসেছে অনেক আগে। এজেন্সি নির্ভর দেশের বর্তমান চ্যানেলগুলোর নাটক প্রচারের দায়িত্বে থাকছে চ্যানেলগুলোর মার্কেটিং বিভাগ। কয়েকটি চ্যানেল পুরোপুরিভাবে এই সিস্টেমে না জড়ালেও নাটকের ওপর এজেন্সির কর্তৃত্বটা চলছে নিয়মিতই।

তাই বলা যায়, বর্তমান নাটকের অবস্থাটা জড়িয়ে আছে বিপণন সিস্টেমের মধ্যে। এমনকি সেখান থেকে বের হওয়ার সুযোগও কম চ্যানেলগুলোর।

  • সর্বশেষ - বিনোদন