, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

মুক্তাগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: সেবা বাড়ায় বেড়েছে রোগীর চাপও

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ : 

মুক্তাগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: সেবা বাড়ায় বেড়েছে রোগীর চাপও

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢুকতেই চোখে পড়বে বাহারি রঙের ফুল ও ভেষজ গাছের বাগান। কিছুটা সামনেই হাসপাতালের বহির্বিভাগ, তারপর জরুরি বিভাগ। প্রতিটি বিভাগেই আছে রোগীর চাপ। বহির্বিভাগ, জরুরি ও ভর্তি মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১১০০ থেকে ১২০০ রোগীকে চিকিৎসা দেন এখানকার চিকিৎসকরা। সেবার মান ভালো হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকেও রোগীরা আসেন চিকিৎসা নিতে। চিকিৎসাসেবায় দেশসেরা ১০ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরস্কারও পেয়েছে এই হাসপাতাল।

সরেজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে বহির্বিভাগে টিকিট কাটার জন্য শিশু, নারী, পুরুষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা লাইনের ব্যবস্থা রয়েছে। টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও রয়েছে রোগীদের চাপ। আবার হাসপাতালের প্যাথলজির সামনে ঝুলানো রয়েছে পরীক্ষা ফি’র তালিকা।

jagonews24

কথা হয় বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা দুলাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি কোমরের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম। টিকিট কেটে ডাক্তার দেখিয়েছি। হাসপাতাল থেকেই সব ওষুধ দিয়েছে।

উপজেলার চড়াত পাখিয়া এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে সেলিনা খাতুন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে শরীর জ্বালাপোড়া করে। তাই, এখানে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। ডাক্তার দেখে ওষুধ লিখে দিয়েছেন। আর ওষুধও হাসপাতাল থেকেই দিয়েছে।

একই এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বুকের ব্যথা ও পেটের সমস্যা নিয়ে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার দেখে এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে দিয়েছেন। এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি হাসপাতাল থেকেই করে দেবে। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার ওষুধ দেবেন।

jagonews24

হাসপাতাল সূত্র জানায়, নিয়মিত সিজারিয়ানসহ বিভিন্ন রোগের অপারেশন (অস্ত্রোপচার) হচ্ছে হাসপাতালটিতে। মেডিসিন, চক্ষু, গাইনি, শিশু, অর্থোপেডিক্স, কার্ডিওলজির চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। চক্ষু বিভাগ অনলাইনের মাধ্যমে চালু রাখা রয়েছে, তবে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অর্থোপেডিক্স বিভাগ চালু থাকলেও নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বাকি বিভাগগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। হাসপাতালে ৯ জন চিকিৎসক, দুজন চিকিৎসা সহকারী, তৃতীয় শ্রেণির তিনজন এবং চতুর্থ শ্রেণির তিনজনের পদ শূন্য রয়েছে।

হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডে কিডনি সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের বৃদ্ধা রহিমা বেগম। তার মেয়ে পারভিন আক্তার বলেন, মায়ের কিডনির অপারেশনের পর ইনফেকশন হয়। পরে এই হাসপাতালে ভর্তি হই, এখানে নিয়মিত ডাক্তাররা এসে ড্রেসিং করেন। ভর্তির পর থেকে তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। মা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো আছেন। ওষুধ কিছু হাসপাতাল থেকেও দেওয়া হচ্ছে আবার কিছু ওষুধ বাইরে থেকেও কিনতে হয়েছে।

jagonews24

পিঠে ফোড়া নিয়ে চারদিন ধরে হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন আব্দুল মোতালেব। তার মেয়ে মনি আক্তার বলেন, বাবার পিঠে ফোড়া হয়েছে। কিন্তু, ডায়াবেটিস থাকায় ফোড়া কাটতে পারছেন না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসলে ফোড়া কাটা হবে। তাই, হাসপাতালে বাবাকে ভর্তি করিয়েছি। এখানে ডাক্তার নিয়মিত আসে, ওষুধ হাসপাতাল থেকেই দিচ্ছে। তাছাড়া হাসপাতাল থেকে দেওয়া খাবারের মানও ভালো।

জ্বর ও পেটের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪ বছর বয়সী আপন মিয়া। তার মা নারগিস আক্তার বলেন, জ্বর ও পেটের সমস্যার কারণে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। কিছু ওষুধ হাসপাতাল থেকেও দিয়েছে আবার কিছু ওষুধ কিনতে হয়েছে। এখানে সকাল, দুপুর, বিকেলে ডাক্তার ও নার্স আসেন। তারা নিয়মিত রোগীর খোঁজ-খবর নেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, ইউরিন ও ব্লাড টেস্ট সরকার নির্ধারিত ফি’তে করা হচ্ছে। এখানে থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে রক্ত সঞ্চালন বেড এবং ২৫০ ব্যাগ রক্ত রাখার ফ্রিজের ব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতালে বর্তমানে ৩০ থেকে ৩২ জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

jagonews24

তিনি বলেন, দিনদিন সেবার মান ভালো হওয়ায় রোগী বেড়েছে। তাই, হাসপাতালটিকে আমরা নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছি। হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগ আলাদা করা হয়েছে। হাসপাতালের গাইনি ও লেবার ওয়ার্ড আলাদা করেছি। হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারির জন্য আলাদা ব্যবস্থা। অপারেশন থিয়েটার রয়েছে দুটি। একটি সিজারিয়ান ও অন্যটি সাধারণ অপারেশনের জন্য। জুলাই মাসে ২২২টি নরমাল ডেলিভারি ও ৯টি সিজারিয়ান করা হয়েছে।

ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, কোন কোন ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে, তা আউটডোরে সবসময় তালিকা টানানো থাকে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্যও একই ব্যবস্থা। হাসপাতালে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। ওষুধও পাচ্ছেন সব রোগীরা। তবে, সরকারিভাবে সাপ্লাই না থাকা কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। আমরা গত অর্থবছরে ৪৭ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছি। জরুরি প্রসূতি সেবায় ২০১৯ সালে পুরস্কার পেয়েছি।

jagonews24

তিনি বলেন, আমরা যখন যা চাহিদা পাঠিয়েছি, তখন তাই পেয়েছি এবং সেগুলো কাজে লাগিয়েছি। কাজে লাগানোর কারণেই আমাদের সেবাটা সবসময় সচল ছিল। এতে রোগীর চাপও বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমিসহ ৩৪ জন চিকিৎসক রয়েছি। এই জনবলে দৈনিক প্রায় ১২০০ রোগীর সেবা দেওয়া খুব কঠিন। তাই জনবল পেলে সেবার মান আরও ভালো হতো।

ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, হাসপাতালের আবাসিক কোয়ার্টারগুলো ২০১১ সালে তৈরি করা হয়। এরপর থেকে কোনো মেরামত হয়নি। তাই, কোয়ার্টারগুলোতে কেউ থাকে না। চিঠি দিয়েছি, এই বছরে মেরামত করে দেওয়ার কথা রয়েছে। মেরামত হলে সবাই থাকবে বলে আশা করা যায়।

  • সর্বশেষ - মহানগর