, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

ড. এনামুল হককে শ্রদ্ধা জানালেন বগুড়াবাসী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ : 

ড. এনামুল হককে শ্রদ্ধা জানালেন বগুড়াবাসী

স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাস ও শিল্পকলা বিশারদ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এনামুল হকের মরদেহে বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। 

শুক্রবার (১৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় তার মরদেহ শহীদ খোকন পার্কে নেওয়া হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ, জেলা আওয়ামী লীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ড. এনামুল হকের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ভেলুরপাড়া খোদাদিলা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে জুমা নামাজের পর তাকে দাফন করার কথা রয়েছে।  

ড. এনামুল হকের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না জানান, আমরা খুবই শোকাহত। ড. এনামুল হক আমাদের মাঝ থেকে চলে যাওয়ায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। আমরা বিশ্বাস করি, তিনি ইতিহাস ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার জন্য যেভাবে দেশের প্রত্যেকটা অঞ্চলের প্রান্তরে প্রান্তরে ঘুরে বেরিয়েছেন- এটা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, বাংলাদেশের জাদুঘর বা পুরাকীর্তি বলতে ড. এনামুল হকের নাম উঠে আসে। দেশে প্রত্নত্বাত্ত্বিক ক্ষেত্রে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সবার অগ্রজ তিনি। ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মশ্রী পদকেও ভূষিত হয়েছেন তিনি। যা শুধু বগুড়া নয়, দেশের জন্য গর্বের।

বগুড়ার প্রথিতযশা প্রত্নতাত্ত্বিক ড. এনামুল হক গত ১০ জুলাই দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। এনামুল হক বগুড়ার সোনাতলার ভেলুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে বসবাস করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছেন। তারা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। প্রায় সাত বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। 

প্রফেসর ডক্টর এনামুল হক ১৯৩৭ সালের ১ মার্চ  বগুড়ার ভেলুরপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বগুড়া জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক ও ইতিহাস-প্রত্নতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দক্ষিণ এশিয়ার শিল্প নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। কর্মজীবনে ১৯৬২ সালে এনামুল হক তৎকালীন ঢাকা জাদুঘরে যোগদান করে। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে অধ্যক্ষ, ১৯৬৯ সালে পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। 

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা জাদুঘরকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রুপান্তর করা হয় এবং এর প্রতিষ্ঠাকালীন মহাপরিচালক হিসেবে এনামুল হক যোগদান করেন। মহাপরিচালক হিসেবে তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে তাকে ১৯৯০ সালে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ২০১৪ সালে গবেষণার ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি একুশে পদক লাভ করেন। সংস্কৃতিতে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য ২০১৭ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। 

  • সর্বশেষ - অন্যান্য