, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যু ডাক্তার দেখানোর কথা বলে শিশু সন্তানকে নিয়ে বের হন তানিয়া

  নিজস্ব প্রতিবেদক

  প্রকাশ : 

ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যু ডাক্তার দেখানোর কথা বলে শিশু সন্তানকে নিয়ে বের হন তানিয়া

ময়মনসিংহে নিজ শিশু সন্তানকে নিয়ে রেললাইনে শুয়ে আত্মহত্যা করা নারীর পরিচয় মিলেছি। তিনি নগরীর বাদেকল্পা এলাকার রাজমিস্ত্রি মো. মুস্তাকিনের স্ত্রী তানিয়া আক্তার (২২) ও তার দুই বছর বয়সী মেয়ে রাইসা আক্তার।

তানিয়ার বাবার বাড়ি তারাকান্দা উপজেলার মালিডাঙ্গা গ্রামে। জামালপুর রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুকন উদ্দিন জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুপুর পৌনে ১টার দিকে একটি লোকাল ট্রেনের নিচে দুই বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে ঝাঁপ দিয়ে মারা যান তানিয়া। ঘটনাটি ময়মনসিংহ নগরীতে হলেও এটি জামালপুর জিআরপির এরিয়া। তাই মামলা জামালপুর রেলওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ ফেসবুক ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, কালো বোরকা পরা ওই নারী শিশুকে কোলে নিয়ে রেললাইনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। ট্রেন কাছাকাছি আসতেই ওই নারী রেললাইনে শুয়ে পড়েন। এতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় দুজনের দেহ। ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পর পরিচয় মিললে সন্ধ্যায় নিহতের স্বজনরা ভিড় করেন ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানায়। স্ত্রী ও মেয়ে রায়সাকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বামী মোস্তাকিন।

মোস্তাকিন বলেন, তানিয়া দীর্ঘদিন যাবত মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এর আগেও কয়েকবার বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। সকালে ডাক্তার দেখাবে বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। টাকা দিয়ে আমি কাজে চলে যাই। সন্ধ্যার দিকে খবর পাই আমার স্ত্রী শিশু সন্তানকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আমার ৬ বছরের আরও একটা মেয়ে আছে। ওকে এখন কে দেখাশোনা করবে?

প্রত্যক্ষদর্শী সানকিপাড়া কলেজ রোড এলাকার গেটম্যান আব্দুল কাদের বলেন, ট্রেনটি লেভেল ক্রসিংয়ের কাছাকাছি আসতেই ওই নারী প্রথমে রেললাইনে ঝাঁপ দেন, পরে শিশুটির মাথা ঢুকিয়ে দেয়। এ দৃশ্য দেখার পর আমার মাথাও ঠিক নেই। যদি বুঝতে পারতাম তিনি ট্রেনে ঝাঁপ দেবেন, তাহলে তাকে বাঁচাতে পারতাম।

এসআই রুকন উদ্দিন বলেন, নিহত তানিয়ার দুই ভাই, পাঁচ বোন। দুই ভাইয়ের মাঝে এক ভাই মানসিক প্রতিবন্ধী। আবার তানিয়ার মায়েরও একই সমস্যা। তিনি প্রায়ই বাড়ির কাউকে কিছু না বলে বিভিন্ন আত্মীয়র বাড়ি চলে যেতেন। এসব কারণে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার সালিশ হয়েছিল। সালিশে স্বামী মোস্তাকিন তাকে তালাক দিতে চেয়েছিলেন। কিন্ত বুঝিয়ে তানিয়াকে তার ঘরে তুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে কবিরাজি চিকিৎসা চলছিল তানিয়ার। ঘটনার দিন সকালে ডাক্তার দেখাবে বলে টাকা নিয়ে বের হন। বাড়ি থেকে বের বের হয়ে সানকিপাড়া কলেজ গেট এলাকায় রেললাইন ধরে হাটছিলেন। ট্রেন আসতেই হঠাৎ তিনি রেললাইনে শুয়ে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই মা ও শিশু মারা যান।

  • সর্বশেষ - ময়মনসিংহ অঞ্চল