চলে গেলেন ময়মনসিংহের সর্বজন শ্রদ্ধেয় রতন স্যার
প্রকাশ :
ময়মনসিংহের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু মুকুল ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা, মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের রেক্টর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব আমীর আহাম্মদ চৌধুরী রতন (৭৭) স্যার আর নেই। সবাইকে কাঁদিয়ে অন্তিম শয়ানে চির বিদায় নিয়েছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত সোয়া ১১টায় রাজধানীর বাংলাদেশ বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) বাদ জুম্মা নগরীর আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, গৃহায়ণ ও গণপূূর্ত মন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল এমপি, জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও মরহুমের পুত্র অরূপ চৌধুরী।
জানাজা শেষে মরদেহ দাফনের জন্য তার নিজ গ্রামের বাড়ি ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে গত ৮ অক্টোবর আমীর আহমেদ চৌধুরীকে বার্ধক্যজনিত কারণে তাকে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
১৯৫৬ সালে তিনি সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৬০ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মেধা তালিকায় নবম স্থান নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৮৩-র সেপ্টেম্বর থেকে তিনি যোগ দেন ময়মনসিংহের মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। বর্তমানে তিনি মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের রেক্টর ছিলেন।
দুর্বল শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস করানো, বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের খবর নেয়া, সহকর্মী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক, স্কুলের পরিবেশ তদারকি ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত সময় কাটানো মানুষটির নাম আমীর আহাম্মদ চৌধুরী রতন। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে যিনি এ শহরের সর্বমহলে শ্রদ্ধার পাত্র।
১৯৭০-এর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর চট্টগ্রামের উপকূলে তিনি মুকুল ফৌজের ৪৭ জন কর্মী নিয়ে ত্রাণ কাজে অংশ নেন। এরপর ১৯৭৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮-এ বন্যার সময় মকুল ফৌজ এবং মুকুল নিকেতনের ছাত্রদের নিয়ে বন্যার্ত সহায়তায় তার কার্যক্রম এখন মানুষ স্মরণ করে।
সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম হিসেবে মুকুল নিকেতন জেলা তো বটেই, দেশের হাতেগোণা বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। এ স্কুলে আবৃত্তি, নৃত্য, সংগীত, ক্রিকেট, ফুটবল, স্কাউটিং, গার্লস গাইড, বিতর্ক ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আর সব বিষয়েই দেখভাল করেন রতন স্যার। ১৯৮৪ সালে তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি পান।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, মেয়ে জামাতা, নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজনসহ দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য শিক্ষার্থী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার যোগ্য নেতৃত্ব, দক্ষতা ও পরিশ্রমের ফলেই ময়মনসিংহের মুকুল নিকেতন দেশসেরা বিদ্যালয়গুলোর একটি।