, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ অনলাইন সংস্করণ

ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলার ১১ খাদ্য গুদামে দায়িত্ব নিতে মরিয়া ২৫ তরিৎকর্মা

  শাহ মোহাম্মদ রনি

  প্রকাশ : 

ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলার ১১ খাদ্য গুদামে দায়িত্ব নিতে মরিয়া ২৫ তরিৎকর্মা

ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলার ১১টি খাদ্য গুদামে দায়িত্ব নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ২৫ ‘তরিৎকর্মা’। একেক জন প্রার্থী তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করছেন কাঙ্খিত গুদামে দায়িত্ব পাওয়ার জন্য। এ নিয়ে খাদ্য পরিদর্শক সমিতির ২ গ্রুপের মধ্যে চলছে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। নানান কৌশলে ‘বদলি বাণিজ্য সিন্ডিকেট’ হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণের টাকা। কলকাঠি নাড়ছেন ডাকসাইটের একজন খাদ্যশস্য পরিবহন ঠিকাদার ও আরেকজন ডাকসাইটের খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য গতিতে লড়াই চলেছে শেয়ানে শেয়ান। এ সুযোগে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছেন কেউ কেউ। একটি গুদামের জন্য একাধিক ডিও লেটার (সরকারি বিষয়ে বেসরকারিভাবে লিখিত পত্র), স্বশরীরে ও সেলফোনে তদবির পেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন খাদ্যমন্ত্রী, খাদ্য সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গুদামে ওসিএলএসডিদের বদলির আদেশ জারি করতে হিমশিম খাচ্ছেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড)। তবে মঙ্গলবারের মধ্যে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, দেশের সিএসডিগুলোতে ম্যানেজার, সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসএমও এবং গুদামে ওসিএলএসডি পদে সরাসরি নিয়োগ না থাকায় ঘটছে যতসব তদবির কাণ্ড। সুযোগ বুঝে বিভিন্ন গুদামে দায়িত্ব নিতে মরিয়া হয়ে মাঠে নামেন এক শ্রেণীর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং খাদ্য পরিদর্শক। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গুদামে বদলির তদবির নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের ডাকসাইটের নেতারা। বিপত্তিতে পড়তে হয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। সূত্র মতে, ময়মনসিংহের ৪টি, নেত্রকোনার ৪টি, শেরপুরের ২টি এবং জামালপুরের ১টিসহ মোট ১১টি গুদামে দায়িত্ব নিতে চলছে যতসব কাণ্ড। এ সুযোগে কাঙ্খিত গুদামে বদলি করিয়ে দেওয়ার নামে ফায়দা লুটছে খাদ্য পরিদর্শক সমিতির ২ গ্রুপ। একটি রহমান-উত্তম পরিষদ। অপরটি আজাদ-দেলোয়ার পরিষদ। বদলির আদেশ হওয়ার অপেক্ষায় থাকা গুদামগুলো হলো ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, নাগলা, ধলা ও গয়েশপুর, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, ঠাকুরাকোনা, সদর ও কেন্দুয়া, শেরপুরের সদর ও ঝিনাইগাতী এবং জামালপুরের মেলান্দহ। অপরদিকে স্থানীয় এমপির চাহিদা অনুযায়ী ময়মনসিংহের গয়েশপুর, নেত্রকোনার সদর ও ঠাকুরাকোনা, শেরপুরের সদর এবং জামালপুরের মেলান্দহ গুদামে যিনি কর্মরত আছেন তিনিই আরও ১ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে গত ২৮-০৯-২০২১ তারিখে আরসি ফুডের এক আদেশে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে মোঃ বাবুল মিয়া ও শ্যামগঞ্জে সিদ্ধার্থ শংকর তালুকদার, জামালপুরের সরিষাবাড়িতে মোঃ সাইফুল মালেক ও দেওয়ানগঞ্জে এরশাদুর রহমান খানকে ওসিএলএসডি হিসেবে বদলি করা হয়। এরশাদুর রহমান খান পারিবারিক কারণে দেওয়ানগঞ্জে বদলির আদেশ বাতিল করে ময়মনসিংহ জেলার যেকোনো গুদামে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য আরসি ফুড বরাবর আবেদন করেছেন। মানবিক কারণে তাকে তারাকান্দা গুদামে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে তারাকান্দায় ২ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই দায়িত্ব হস্তান্তর করার জন্য আরসি ফুড বরাবর আবেদন করেছেন ব্যাপক সমালোচিত ওসিএলএসডি মোঃ সহীদুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। গত বোরো সংগ্রহ অভিযানের মাঝামাঝি তারাকান্দা গুদাম থেকে ময়মনসিংহ সিএসডিতে মজুদের জন্য নিম্নমানের চাল প্রেরণ করা হয়েছিলো। দেনদরবারের এক পর্যায়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলা হয়। অপরদিকে কাঙ্খিত গুদামে বদলি হতে মরিয়া তালিকায় রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা ছাড়াও আরও ৭-৮ জন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট গুদামে ২৫-০৭-২০১৯ তারিখে মোহাম্মদ আরিফুর রহমান দায়িত্ব নেন, তার স্থলে মুনতাসির আল মামুন, নাগলায় ২৫-০৮-২০১৯ তারিখে মোঃ মমিনুল ইসলাম তালুকদার দায়িত্ব নেন, তার স্থলে দীপায়ন দত্ত মজুমদার ও মোঃ হাসান তারিকুর রহমান (রিফাত), ধলায় ২৮-০৬-২০১৯ তারিখে শেখ শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেন, তার স্থলে খন্দকার মোঃ ইলিয়াস কাঞ্চন, মোঃ আব্দুল কাইয়ুম ও মোঃ এনায়েত করিম এবং গয়েশপুরে ২২-০৮-২০১৯ তারিখে এবিএম ফজলে রানা দায়িত্ব নেন, তার স্থলে অন্য কেউ, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ০৪-০৭-২০১৯ তারিখে মোঃ হুমায়ুন কবীর দায়িত্ব নেন, তার স্থলে মোতাকাব্বির খান, ঠাকুরাকোনায় ২৯-০৯-২০১৯ তারিখে মোঃ হারুন-অর-রশিদ দায়িত্ব নেন, তার স্থলে মোঃ ইমরুল কায়েস, সদরে ২৮-১০-২০১৯ তারিখে মোঃ ইমরুল কায়েস দায়িত্ব নেন, তার স্থলে মোঃ হারুন-অর-রশিদ এবং কেন্দুয়ায় ২৯-০৯-২০১৯ তারিখে সঞ্জয় মোহন দত্ত দায়িত্ব নেন, তার স্থলে নিরঞ্জন চন্দ্র পাল ও ইব্রাহিম খান লেলিন, শেরপুর সদরে ১৬-০৯-২০১৯ তারিখে এফ. এম. রাহাতুল ইসলাম সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা (এসএমও) হিসেবে দায়িত্ব নেন, তার স্থলে শাকিলা শারমীন ও ঝিনাইগাতীতে ০৯-০৯-২০১৯ তারিখে আয়মান বিন্‌তে ফেরদৌস (নূপুর) দায়িত্ব নেন, তার স্থলে দেবব্রত দাস এবং জামালপুরের মেলান্দহে ০১-০৭-২০১৯ তারিখে মোঃ সাইফুল ইসলাম (রতন) দায়িত্ব নেন, তার স্থলে আয়মান বিন্‌তে ফেরদৌস (নূপুর) ও হুমায়ুন খালিদ কাজল দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন।
 


  • সর্বশেষ - ময়মনসিংহ অঞ্চল